ব্যাটিং ধসে টাইগাররা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: এমনিতেই বাংলাদেশের সামনে পাহাড়সম লিড। উইকেট ধরে রেখে যেখানে বড় সংগ্রহের চিন্তা করবে বাংলাদেশ, সেখানে ইনিংসের শুরুতেই ফিরে গেছেন দুই ব্যাটসম্যান। দলীয় ১ রানের সময় ডাক মেরে সাজঘরে ফেরত যান সৌম্য সরকার। এরপর ২ বলে ৪ রান করে আউট হন নাজমুল হোসেন শান্ত।
২ উইকেট হারানোর পর সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক ও তামিম ইকবাল। দুজনের জুটিতে উঠেছে ৫৮ রান। কিন্তু দলীয় ৬৯ রানে রাহকিমের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক মুমিনুল। ৩৯ বলে অধিনায়কের রান ২১। এরপর তামিমকে সঙ্গ দিতে আসে মুশফিক। স্কোরকার্ডে ২ রান যোগ না হতেই উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন তামিম ইকবাল। ৫২ বলে নিজের ঝুলিতে পুরেছেন ৪৪ রান।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১৫.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭১ রান।
এর আগে ২৫ রানের ব্যবধানে শেষ চার উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ডা সিলভা ও আলজারির শতাধিক রানের জুটিতেই চারশ পার করার পথে ছিল তারা। কিন্তু ৯২ রানে ডা সিলভার বিদায়ে উইন্ডিজের স্কোর দাঁড়ায় ৩৮৪/৭। এই প্রতিরোধ ভাঙার পর আলজারিও টিকতে পারেননি। ৮২ রানে আউট হন আবু জায়েদ রাহীর পরে। ডানহাতি পেসার তার পরের ওভারে ফেরান জোমেল ওয়ারিকানকে। ডা সিলভাকে মাঠছাড়া করা তাইজুল ইসলাম ৮ রানে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানান। তাতে শেষ হয় সফরকারীদের ইনিংস। ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ৪০৯ রান।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের দুই বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানের একজন ছিলেন এনক্রুমাহ বোনার। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের চেষ্টাতেও সেঞ্চুরি হলো না তার। ৭৪ রানে অপরাজিত খেলতে নামা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে ৯০ রানে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের জন্য বোনারের উইকেটটি অনেক আকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু তাকে ফিরিয়েও স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ।
সেই স্বস্তি কেড়ে নিলেন অপরপ্রান্তে টিকে থাকা জসুয়া দা সিলভা। আলজারি জোসেফকে নিয়ে জুটি গড়ে দুর্দান্ত খেলে যাচ্ছিলেন তিনি। এ জুটি যোগ করে ১১৬ রান। দলীয় সংগ্রহ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮৭ রানে। অবশেষে জুটি ভাঙলেন বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। আর্মবলে জুসায়কে ঘায়েল করলেন তাইজুল। বলটি সরাসরি ভেঙে দেয় জসুয়ার উইকেট।
আউট হওয়ার আগে ১৮৭ বলে ৯২ রান করেন জসুয়া দা সিলভা, যা তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। দশটি চারের মারে এ ইনিংস সাজিয়েছিলেন জসুয়া।
তাইজুলের উদযাপন শেষ হতেই ক্যারিবিয় শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন রাহি। ব্যক্তিগত ৮২ রানে আলযারি জোসেফকে ফেরান তিনি। স্কোরকার্ডে ২ রান যোগ হতেই ফেরান নতুন ব্যাটসম্যান ওয়ারিকেনকে।
চট্টগ্রাম টেস্টে হারের পর মিরপুরে তিন পরিবর্তন নিয়ে নামে বাংলাদেশ দল। কুঁচকির ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়া সাকিব আল হাসানের জায়গায় আসেন সৌম্য সরকার। বাদ পড়েছেন সাদমান ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান। তাদের বদলে আসেন মোহাম্মদ মিঠুন ও আবু জায়েদ রাহি। একাদশে এক পেসার আর তিন স্পিনার অর্থাৎ ঘুরেফিরে সেই স্পিন নির্ভর দল নিয়েই লড়াইয়ে নামে স্বাগতিকরা।
শুরুতে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশের জন্য দিনের প্রথম সেশনটা ছিল হতাশার। দুই ক্যারিবীয় ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট এবং জন ক্যাম্পবেল মিলে তুলে ফেলেন ৬৬ রান। উইকেটে জেঁকে বসা জুটি ভেঙে ব্রেক থ্রু এনে দেন তাইজুল ইসলাম। এলবির ফাঁদে ফেলে ক্যাম্পবেলকে ফেরান তাইজুল। ৩৬ রান করে ফেরেন ক্যাম্পবেল। এরপর ওই এক উইকেট হারিয়েই ৮৪ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় উইন্ডিজ।
দ্বিতীয় সেশনটা বাংলাদেশের বোলারদের জন্য হয়ে দাঁড়ায় টার্নিং পয়েন্ট। কারণ এই সেশনের প্রথম ২১ ওভারে ৩৪ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লাঞ্চের পর শাইনে মোসলের উইকেট তুলে নেন আবু জায়েদ রাহি। স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরের বলে শট খেলতে চেয়েছিলেন মোসলে (৭), কিন্তু বল তার ব্যাটে লেগে স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়। ওদিকে অন্যপ্রান্ত আগলে ছিলেন ব্র্যাথওয়েট। ক্যারিবীয় অধিনায়ক ছুটছিলেন ফিফটির পথে। কিন্তু ৪৭ রান করেই সৌম্য সরকারের বলে বিদায় নেন তিনি।
তবে বাংলাদেশ দলের জন্য সবচেয়ে বড় স্বস্তি হয়ে আসে কাইল মেয়ার্সের উইকেট। চট্টগ্রাম টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিয়ানকে এদিন অল্পতেই বিদায় করেন আবু জায়েদ। শেষ বিকেলে এই দুই ব্যাটসম্যানকে তেমন কঠিন কোনো পরীক্ষার মুখেই ফেলতে পারেননি। সবমিলিয়ে ক্যারিবীয়দের পাশাপাশি নিজেদেরও অস্বস্তিতে রেখে প্রথম দিন পার করলো মুমিনুলবাহিনী।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)