মিয়ানমারে আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার ঘিরে ক্ষোভ বাড়ছে
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: মিয়ানমারে গ্রেপ্তারের মধ্যেও সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধীরা অষ্টম দিনের মতো প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন। স্টেট কাউন্সিলর সু চিকে আটক রাখা এবং বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, শনিবার হাজারো মানুষ মিছিল নিয়ে ইয়াঙ্গুনের ব্যবসায়িক কেন্দ্রের দিকে যায়। রাজধানী নেপিদো, দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ম্যানান্ডেসহ আরও কয়েকটি শহরে সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পুলিশের হানা দিয়ে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরা ‘রাতের বেলায় অপহরণ বন্ধ করো লেখা সম্বলিত প্লাকার্ড বহন করে। সামরিক শাসনবিরোধী প্রতিবাদে যোগ দেন বিমানকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, ইঞ্জিনিয়ার এবং স্কুল শিক্ষক। বিক্ষোভকারীদের একটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আমরা প্রি-স্কুল শিক্ষক, প্রত্যেক শিশুই আমাদের ভবিষ্যত। আমরা একনায়কতন্ত্র চাই না।’
শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি কর্মকর্তা, সাধারণ মানুষ, মানবাধিকার কর্মী এবং সন্যাসীসহ অন্তত ৩৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সামরিক জান্তা। এদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক অভিযোগে চার্জ গঠন করেছে পুলিশ।
সাংবাদিক সিউ-ই-উইন পশ্চিম শহর পাথেইন থেকে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতেন। বৃহস্পতিবার পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায় । তার মা ‘থিয়েন থিয়েন’ বলেন, সেই থেকে তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। আমি সত্যিই খুব চিন্তিত। তার সন্তান দুধ খেতে না পেরে সমস্যার মধ্যে আছে। পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় সে জুতাও খুলতে পারেনি।
এ বিষয়ে সামরিক সরকার কর্তৃপক্ষের কাছে রয়টার্স নিউজ এজেন্সি মন্তব্য চাইলে তারা কোনো জবাব দেয়নি।
সরকার সমালোচকদের ব্যাপকভাবে গ্রেপ্তারের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সামরিক আইন অমান্য করার কারণে এক ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুলিশ রাতের আধারে কিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। ইন্টারনেটে আন্দোলনকারীদের একটি মিমে ক্যাপশন ছিল, ‘আমাদের রাত নিরাপদ নেই, মিয়ানমারের পুলিশ রাতের আধারে মানুষদেরকে অপহরণ করছে।’
রাজ বন্দীদের সহযোগিতা বিষয়ক একটি ওয়াচডগ সংগঠন এসব ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলে, কোন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে পরিবারের সদস্যরা সেটা জানতে পারছে না। প্রিয়জনদের কোথায় কীভাবে রাখা হয়েছে সেটাও তারা জানতে পারছে না। এসব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সমগ্র দেশজুড়ে বিরোধীদের ধরতে রাতের বেলায় অভিযান চালানো হচ্ছে।
গত ১ ফেব্রুয়রি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়নামারে ২০১১ সালে শুরু হওয়া গণতন্ত্রের যাত্রা থেমে গেল। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির কারণে তারা ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। ওই নির্বাচনে সু চির দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি’ ব্যাপক জয় পায়। নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। সু চিকে গ্রেপ্তার করে জান্তা সরকার তার বিরুদ্ধে অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দায়ে অভিযোগ গঠন করেছে। এই মামলায় সু চির দুই বছরের জেল হতে পারে।
সু চির রাজনৈতিক দল এনএলডি’র প্রেস অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সু চির বাসায় আটজন থাকছে এবং সু চি সুস্থ আছেন।
শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল এক প্রস্তাবে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের প্রতি সু চিসহ গ্রেপ্তার অন্যান্য কর্মকর্তাদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং প্রতিবাদকারীদের ওপর সহিংসতা বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মিয়ানমার অধিকার বিষয়ক তদন্তকারী থমাস অ্যান্ডু জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ এক সেশনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলকে মিয়ানমারের প্রতি অবরোধ এবং অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিয়ান্ত থু ওই সেশনে বলেন, ‘মিয়ানমার বর্ধমান গণতান্ত্রিক যাত্রা থামাতে চায় না। আর এর জন্য বৈশ্বিক সহযোগীতা প্রয়োজন। জাতিসংঘ চলতি সপ্তাহে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জেনারেলদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
শনিবার সু চির রাজনৈতিক দল ফেসবুকে এক বিবৃতিতে জানায়, সেনা শাসকদের সাইবার আইন চাপিয়ে দেয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। সামরিক অভ্যুত্থানকারীদের অনুমোদনকৃত সকল আইন ই অবৈধ।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)