আল আমিন, কুবি প্রতিবেদক: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) সংলগ্ন বিনোদন কেন্দ্র ও পার্কের শব্দদূষণে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।এসব পার্কে বিভিন্ন স্থান থেকে ঘুরতে আসা গাড়িগুলোর আসা-যাওয়ার পথে অনিয়ন্ত্রিত হাইড্রোলিক হর্ণের তীব্র শব্দ, মাইকের শব্দ ও পার্কের ভিতরের সাউন্ড বক্সের শব্দের জন্য পড়াশোনায় এমনকি পরীক্ষার হলেও মনোনিবেশ করতে পারছে না তারা। 

 

 

 

 

 

 

 

সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন স্বপ্নচূড়া, ম্যাজিক প্যারাডাইস ও ব্লু ওয়াটার পার্কে প্রায় প্রতিদিনই ট্যুরের বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন গাড়ি এসব বিনোদন কেন্দ্রে যাতায়াত করে। এসব গাড়ির শব্দে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও বিশ্রাম দূর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এখন শব্দদূষণের মাত্রা এতো বেড়ে গেছে যে তারা পরীক্ষার হলেও মনোযোগ সহকারে ঠিকমতো পরীক্ষা দিতে পারছে না।

এ ব্যাপারে একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, 'পার্কের উচ্চশব্দের মাত্রা যেন দিন দিন বেড়েই চলছে। পড়াশোনায় তো মনোনিবেশ করা যাচ্ছেই না, পরীক্ষার হলে বসেও তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগেও এ বিষয়ে বারবার আওয়াজ তুলেও কোন প্রতিকার মেলেনি।'

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ক্ষমতাবলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়৷ বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে৷ কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কগুলোতে শব্দ দূষণ নিয়ে এই আইনের প্রয়োগ দেখা যায়নি৷

জানা যায়, এর আগেও বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পার্কগুলোর কর্তৃপক্ষের সাথে জোরালোভাবে কথা বলার পরও তারা কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিপোর্ট আসার পরও টনক নড়েনি পার্কগুলোর।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন "স্বপ্নচূড়া" পার্কের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, 'এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট কেউ কোন অভিযোগ করে নি। আর এটা পর্যটন এলাকা হওয়ায় এখানে আশেপাশের সব পিকনিক স্পট থেকেই শব্দ আসে।'

ম্যাজিক প্যারাডাইজ পার্কের মালিক মাহবুব আলম বলেন, যারা পার্কে আসার আগে সাউন্ড বক্স বাজায় তাদেরকে তো আমরা বলি নি সাউন্ড বক্স বাজাতে। তবে সামনে থেকে আমরা যতটা সম্ভব জানিয়ে দিব যাতে বিশ্ববিদ্যালয় এড়িয়াতে সাউন্ড বক্স না বাজায়।
আর আমাদের পার্কের ওয়াটার সাইডের সাউন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় না। আমরা সেভাবেই সাউন্ড কমিয়ে সাউন্ড বক্স ব্যবহার করি, তাই অন্যান্য পার্কের সাউন্ডও যেতে পারে।"

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন,'এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবগত আছে এবং ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি প্রতিনিধি টিম প্রেরণ করা হয়েছে পিকনিক স্পটের কর্তৃপক্ষের কাছে। তারা বলছে এ সমস্যাটা খুব শীগ্রই সহনীয় হয়ে যাবে, তারপরও যদি দেখা যায় এ সমস্যাটা ক্রমশ চলতে থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিশ্চয় শিক্ষার্থীদের সুবিধার্তেই যে কোন ধরনের এ্যাকশনে যাবে।'

এ ব্যপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো: আবু তাহের বলেন, 'শব্দ নিয়ন্ত্রনের জন্য আমরা ডিসি অফিসে চিঠি দিয়েছি কয়েকদিন বন্ধ ছিলো। কিন্তু এখন আবার বেড়ে গেছে। পার্ক এবং পর্যটকরা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আশেপাশের প্রতিষ্ঠানের সাথে সু-সম্পর্ক না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা যায় না। কারন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীরা সেখানে ঘুরতে যায়। প্রয়োজনে আমরা আবার পার্কগুলোকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করতে পারবো। তারপরও তারা না শুনলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারবে।'

এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, 'গতবছরও আমরা এ বিষয়ে সবগুলো পার্কে নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। তো এবারও দেখি কি করা যায়। আর গান বাজাতে পারবে না এরকম কোনো আইন নাই, তবে গাড়ির বাহিরে বা পার্কের বাহিরে গানের সাউন্ড যাবে না নিয়মটা এরকম হওয়ার দরকার ছিল। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী কি করা যায় দেখবো। জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সে ব্যবস্থা করবো।'

দ্য রিপোর্ট/আআ/এএস/২০ ফেব্রুয়ারি,২০২১