‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রতিবেদন সরিয়ে নেবে ফেসবুক
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আল জাজিরার তৈরি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামক প্রতিবেদনটি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নেবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান তিনি।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। ফেসবুকের বাংলাদেশ বিষয়ক কর্মকর্তা সাবহানাজ রশীদ দিয়ার সঙ্গেও কথা হয়েছে। ফেসবুক আদালতের নির্দেশনা চেয়েছিল। আমরা আদালতের নির্দেশনা তাদের দিয়েছি। ফেসবুক অফিশিয়ালি জানিয়েছে, তারা খুব দ্রতই আল-জাজিরার প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেবে।
এছাড়া, ইউটিউব থেকেও সরানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা চলছে বলেও জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী।
এর আগে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এক রিটের শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট আল-জাজিরায় সম্প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামের প্রতিবেদন ও তথ্যচিত্রটি দেশের সব ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে অপসারণ করতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেন। তবে বাংলাদেশে আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের বিষয়ে কোনো আদেশ আদালত দেননি।
ছয় অ্যামিকাস কিউরি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার বক্তব্য শোনার পর সেদিন এ-সংক্রান্ত রিট আবেদনটি নিষ্পত্তি করে ওই আদেশ দেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ।
কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরায় ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র প্রচার করা হয়। সেটি বিভ্রান্তিকর, বিদ্বেষমূলক ও মানহানিকর উল্লেখ করে দেশে আল-জাজিরার সম্প্রচার ও ওয়েবসাইট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এনামুল কবির ৮ ফেব্রুয়ারি রিটটি করেন। এতে বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি আদালত রিটের গ্রহণযোগ্যতাসহ কয়েকটি বিষয়ে মতামত দিতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে ছয় আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন। গত সোমবার শুনানির ধার্য তারিখে তারা মতামত তুলে ধরেন। বাংলাদেশে আলজাজিরার সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে হাই কোর্টের একই বেঞ্চে মত দেন পাঁচ অ্যামিকাস কিউরি।
এই পাঁচ অ্যামিকাস কিউরি হলেন- এ জে মোহাম্মদ আলী, ফিদা এম কামাল, কামাল উল আলম, প্রবীর নিয়োগী ও শাহদীন মালিক। এদিন অপর অ্যামিকাস কিউরি আবদুল মতিন খসরু বলেন, রিট আবেদনকারী ব্যক্তিগত ও জাতীয়ভাবে সংক্ষুব্ধ। আদালত ওই তথ্যচিত্র অপসারণের নির্দেশনা দিতে পারেন।
প্রতিবেদন প্রচারের পর বাংলাদেশ সরকার ও সেনাসদর থেকে প্রতিবেদনটির তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ হিসেবে দাবি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জানায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু ‘উগ্রপন্থি ও তাদের সহযোগী, যারা লন্ডন এবং বিভিন্ন জায়গায় থেকে এসব করছে’, তাদের এই ‘বেপরোয়া অপপ্রচারকে’ বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাখ্যান করছে।
আর সেনাসদর থেকে বলা হয়েছে, তথ্যচিত্র আকারে পরিবেশিত প্রতিবেদনটিতে আলজাজিরা কর্তৃক বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে অসংখ্য ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। এর ফলে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। উক্ত প্রতিবেদন দৃষ্টে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সেনাবাহিনী প্রধানকে বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্বের দরবারে বিতর্কিত, অগ্রহণযোগ্য ও হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার সঙ্গে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অন্যান্য অসত্য, বানোয়াট, মনগড়া, অনুমাননির্ভর ও অসমর্থিত তথ্য সংযুক্ত করে এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে, এর ফলে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
উক্ত প্রতিবেদন দৃষ্টে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সেনাবাহিনী প্রধানকে বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্বের দরবারে বিতর্কিত, অগ্রহণযোগ্য ও হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার সঙ্গে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অন্যান্য অসত্য, বানোয়াট, মনগড়া, অনুমাননির্ভর ও অসমর্থিত তথ্য সংযুক্ত করে এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)