ভিন্ন আবহে প্রথম প্রহরে শহীদস্মরণ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই মহান ভাষাশহীদদের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে জাতি। এবার ভিন্ন আবহের মধ্যে একুশের প্রথম প্রহরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে তারা সশরীরে শহীদ মিনারে না আসায় তাদের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নিজ নিজ সামরিক সচিব।
একুশের প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগেই জানিয়েছে, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি ও ন্যূনতম সামাজিক দূরত্ব মেনে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে। একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি লোক শহীদ মিনারে যেতে পারেব না। ফলে এবার এক ভিন্ন আবহ শহীদ মিনার ও আশপাশের এলাকায়।
নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং ব্যক্তিপর্যায়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ দুজন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। শহীদ মিনারের সব প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও লিকুইড সাবান রাখা হয়েছে। মাস্ক পরা ছাড়া কেউ শহীদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে পারবেন না।
‘একুশ মানে মাথা নত না করা’ এই প্রত্যয়ে অনেকে শহীদ মিনার এলাকায় সমবেত হয়েছেন একুশের প্রথম প্রহরে। করোনার কারণে মানুষের উপস্থিতি অন্যবারের চেয়ে অনেকটা কম। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শহীদ মিনারে যাচ্ছেন প্রায় সবাই। সকালে প্রভাত ফেরিতে ভাষাশহীদ রফিক, জব্বার, বরকত, সফিউরদের স্মরণ করতে পুরো জাতি প্রস্তুত।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বাঙালির রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। সেদিন ভাষা আন্দোলন দমন করতে তৎকালীন সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ করে মিছিল করেন। সেই মিছিলে গুলি চলে। শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেকে। তাদের রক্তের দামেই আসে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি। আর তার সিঁড়ি বেয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীনতা, যার নেতৃত্ব দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালির এই আত্মত্যাগের দিনটি এখন আর বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়; ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে সারা বিশ্বে। বাঙালির ভাষার সংগ্রামের একুশ এখন বিশ্বের সব ভাষাভাষীর অধিকার রক্ষার দিন।
গর্ব আর শোকের এই দিনটি প্রতিবছর লাখো মানুষের উপস্থিতিতে পালিত হলেও এবার অনেকটা ভিন্ন আবহে একুশকে স্মরণ করছে জাতি। তবে গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ আগের মতোই দেখা গেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদদের স্মরণ করা হয়। শহীদ মিনারে আসা সবাই খালি পায়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। অনেকের সাদা-কালো পাঞ্জাবি-শাড়িসহ পোশাকে ছিল একুশের ছোঁয়া। বুকে কালো ব্যাচ, হাতে ফুল ও সঙ্গে কালো ব্যানার-ফেস্টুন।
এর আগে শনিবার সকাল থেকেই শহীদ মিনার এলাকাকে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে বসানো হয় ‘ওয়াচ টাওয়ার’। পুরো এলাকা তল্লাশি করা হয় ডগ স্কোয়াড দিয়ে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা, বসানো হয় র্যাব, ডিএমপি ও ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম।
বিকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, দোয়েল চত্বরসহ শহীদ মিনারে প্রবেশের রাস্তাগুলোতে ব্যারিকেড বসিয়ে পাহারা দিতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। সন্ধ্যার পরপরই বন্ধ করে দেওয়া হয় শহীদ মিনারমুখী সড়কগুলো।
রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারা দেশ ও বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতেও শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হবে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)