প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, মিয়ানমার যেন যুদ্ধক্ষেত্র
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ১ ফেব্রুয়ারি মিয়নামারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর গতকাল শনিবার ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ দিন। এদিন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মান্দালয় শহরে পুলিশ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে গুলি করে। এতে মাথায় গুলি লেগে ১৬ বছরের এক কিশোরসহ দুজন নিহত হয়। আহত হয় ২০ জনের বেশি।
মিয়ানমারের সর্ববৃহৎ শহর ইয়াঙ্গুনে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেখানে বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস দমনপীড়ন দেখা যায়নি। কিন্তু এবং শহরের অন্যান্য জায়গার গল্প ভিন্ন। ওইসব জায়গায় পুলিশ এবং সেনাবাহিনী প্রতিবাদ দমাতে সহিংস পদ্ধতি অনুসরণ করছে।
মান্দালয় শহরের বিক্ষোভ সামনে থেকে দেখা একজন নারী ডাক্তার শনিবারের ঘটনার সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রের তুলনা করেন। তিনি এবং তার টিম জলকামান মোতায়েন, বিক্ষোভকারীদের মারধর এবং পুলিশের প্রকাশ্যে গুলি করা প্রত্যক্ষ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ডাক্তার আল জাজিরাকে বলেন, ‘শনিবার প্রথম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে মান্দালয় বন্দরে। সেখানে নাবিকরা একটি জাহাজ দখল করে জাহাজের যন্ত্রপাতি খুলে নেয়। বিক্ষোভকারীদের আরেকটি গ্রুপ বন্দরের কাছে জড়ো হয়। পুলিশ যেন পার না হতে পারে সেজন্য তারা সেখানে ভিড় সৃষ্টি করেন। জাহাজের প্রধান কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার পর নাবিকরা বিক্ষোভকারীদের প্রতি পুলিশকে যেতে দিতে বলেন। প্রতিবাদকারীরা নাবিকদের কথামতো পুলিশ, জলকামান, ট্রাক যেতে দেয়। ভিড় সৃষ্টিকারী জনতা যখন গাড়িগুলো যেতে দিতে পথ তৈরি করছিলেন। এমন সময় জলকামান এবং ট্রাক রাস্তা অবরোধ করে। তারপর ৩৫তম রাস্তা থেকে কোনোরকম সতর্ক করা ছাড়াই আরও জলকামান ও ট্রাক আসে। এরপরেই পুলিশ জলকামান নিক্ষেপ এবং প্রতিবাদকারীদের পেটাতে থাকে।’
ওই নারী নিজের চোখে দেখা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘এক নারী তার বাড়ি থেকে প্রতিবাদ দেখছিলেন। পুলিশ ওই নারীর ওপর আক্রমণ করে এবং তিনি মাথায় মারাত্মক আঘাত পান।’
পুলিশ ঘটনার বর্ণনাকারী নারী ডাক্তারের টিমকে আহত দুই প্রতিবাদকারীকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য ফোন দেয়। আহত ওই দুই প্রতিবাদকারী পুলিশ ভ্যানে ছিলেন । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ডাক্তার বলেন, ‘আহত একজনের মাথা কেটে গিয়েছিল এবং তাকে সেলাই দেয়া হয়। আরেকজন উরুর পাশে দুটি গুলি লেগে আহত হন কিন্তু সেগুলো রাবার বুলেট ছিল না।’ আহত ব্যক্তির প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছিল বলেও জানান তিনি।
ওই ডাক্তার ইমার্জেন্সি মেডিকেলে পাঠানোর জ ন্য আহত দুই ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে বলেন। কিন্তু পুলিশ তাদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ডাক্তারের ওই টিম আহত দুইজনকে অ্যান্টিসেপটিক এবং আহত জায়গায় ব্যান্ডেজ করে।
সেখানে থেকে ওই ডাক্তার এবং তার টিম ৪০তম রাস্তায় যান। সেখানে গিয়ে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখেন। সেখানে কয়েকজন প্রতিবাদকারী মারাত্মভাবে আহত হন। একজন প্রতিবাদকারীর পাকস্থলীতে গুলি লাগে।
ম্যান্ডেলাইয়ের একজন স্টুডেন্ট অ্যাকটিভিস্ট নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সামরিক অভ্যুত্থান বিরোধীরা দিনের বেলায় আটক, মারধর এবং গুলি খাওয়ার ভয় করে এবং রাতে নির্বিচারে আটক হওয়া এবং সামরিক বাহিনী কর্তৃক সংগঠিত সন্ত্রাসের ভয়ে থাকেন।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)