কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ : ১ হাজার ১৮ বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু!
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ আয়োজনের উদ্দেশ্যে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে দেশটিতে। তবে নজিরবিহীন এ কর্মযজ্ঞে ১০ বছরে প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে ৬ হাজারের বেশি অভিবাসী শ্রমিক। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ; অর্থাৎ- ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার অভিবাসী শ্রমিকরাই এ ১০ বছরে বিশ্বকাপ প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি প্রাণ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১০ বছর আগে ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের জন্য অনুমতি পায় কাতার। এর পরই মরুর দেশটিতে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন উপযোগী ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের বিশাল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়।
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের ডিসেম্বরের যে রাতে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের অনুমতি পেয়েছিল, সে রাত থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ৬ হাজারের বেশি অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে কাতারে। অর্থাৎ, প্রতি সপ্তাহে প্রাণ গেছে গড়ে ১২ জন অভিবাসী শ্রমিকের।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সরকারি পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়, ওই পাঁচ দেশের কাতারস্থ দূতাবাস ও অন্যান্য সরকারি কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে জানা গেছে, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের ২,৭১১ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় বাংলাদেশের ১,০১৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন কাতারে। এই দশ বছরে নেপালের ১,৬৪১, পাকিস্তানের ৮২৪ ও শ্রীলঙ্কার ৫৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে কাতারে। উল্লেখ্য, মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। কেনিয়া ও ফিলিপাইনের অভিবাসী শ্রমিকদের পরিসংখ্যান ওই প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়নি।
উপসাগরীয় দেশগুলোতে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে অলাভজনক সংস্থা ফায়ারস্কোয়ার প্রজেক্ট। সংস্থাটির পরিচালক নিক ম্যাকগিহান বলেন, ২০১১ এর পর থেকে মারা যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে বড় একটি অংশ কাতারে এসেছিল বিশ্বকাপ প্রকল্পে কাজ করতে। কারণ কাতার ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ।
উল্লেখ্য, ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজক হতে কাতারের প্রধান বাধা ছিল দেশটির আবহাওয়া। প্রচণ্ড গরম ও মরুর শুষ্ক আবহাওয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে কাতার সেসময় নজিরবিহীন এক উচ্চাভিলাষী অবকাঠামো পরিকল্পনা পেশ করে কর্তৃপক্ষের সামনে। পরে ভোটাভুটিতে ২০১০ সালে ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর পরই ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু হয়। স্টেডিয়াম, নতুন বিমানবন্দর, মহাসড়ক, গণপরিবহন ব্যবস্থা, হোটেল এমনকি নতুন শহরও নির্মাণ শুরু করে কাতার। এতে বিশালসংখ্যক অভিবাসী শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে দেশটিতে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এ বিশালসংখ্যক শ্রমিকের যোগান দেয়।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)