পিতা-মাতার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় ব্যারিস্টার মওদুদ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: হাজারো মানুষের চোখের জলে চিরবিদায় জানানো হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মওদুদ আহমদকে।
শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জের মানিকপুরে নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রথমে তার নির্বাচনী এলাকার কবিরহাট সরকারি কলেজ মাঠে, দ্বিতীয়বার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজ মাঠে এবং সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টায় মানিকপুরের তাঁর গ্রামের বাড়ীর দরজায় তৃতীয় জানাজা শেষ হয়। মাগরিব নামাজের পর সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবা’র কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে দুপুরে ঢাকা থেকে ২টা ৫০ মিনিটে হেলিকপ্টার যোগে তাঁর লাশ কবিরহাট সরকারি বিদ্যালয় মাঠে এসে পৌঁছে। সেখান থেকে লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যানে করে তার মৃতদেহ নির্বাচনী এলাকা কবিরহাট ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে নেয়া হয় মওদুদের মরদেহ। বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রথমে সেখানে, দ্বিতীয়বার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজ মাঠে তার জানাজা হয়। সর্বশেষ সন্ধ্যা ছয়টায় মানিকপুরের তার গ্রামের বাড়ির দরজায় তৃতীয় জানাজা শেষে চোখের জলে বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয় নোয়াখালীর এই কৃতি সন্তানকে।
তিনটি জানাজায় বক্তব্য রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, মওদুদের সহধর্মীনি সাবেক এমপি বেগম হাসনা জসীম উদদীন মওদুদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বরকত উল্যাহ ভুলু, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আবদুর রহমান, বিএনপি নেতা আবদুল হাই সেলিম, কামাল উদ্দিন চৌধুরী, নুরুল আলম সিকদার, জাহাঙ্গির আলম, মাহমুদুর রহমান রিপন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপি, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা, উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন, সেক্রেটারি মাওলানা মোশাররফ হোসাইনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকদলের নেতৃবৃন্দ।
এসময় ছয় বারের সংসদ সদস্য সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদের জানাজা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় করতে অনুমতি না দেয়ায় তীব্র নিন্দা জানান বক্তারা।
নোয়াখালীর তিনটি পৃথক স্থানে জানাজা শুরু হওয়ার আগেই হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয় একনজর তাদের প্রিয় নেতাকে দেখার জন্য। কিন্তু সময়ের অভাবে এ জনপ্রিয় নেতার লাশ কেউ দেখতে পারেনি।
১৯৪০ সালে নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় জন্ম নেয়া মওদুদ আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে যুক্তরাজ্যে ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল ডিগ্রি নেন। পরে দেশে ফিরে যুক্ত হন আইন পেশায়।
কবি জসীমউদ্দীনের জামাতা মওদুদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মপক্ষ সমর্থন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে প্রথম পোস্ট মাস্টার জেনারেল করা হয়।
পরে দেশের প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগ দেন মওদুদ। বিএনপি গঠনে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জিয়া তাকে মন্ত্রী ও পরে উপপ্রধানমন্ত্রী করেছিলেন।
জিয়ার মৃত্যুর পর মওদুদ সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাত ধরেন। এরশাদের নয় বছরের শাসনামলে তিনি মন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।
এরশাদ সরকারের পতনের পরও জাতীয় পার্টিতেই ছিলেন মওদুদ। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি বিএনপিতে ফেরেন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে তিনি আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত মওদুদ, আইন ও সমকালীন রাজনীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন। স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতা, বাংলাদেশ: শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ- প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশের রাজনীতি ও সামরিক শাসন, এ স্টাডি অব দ্য ডেমোক্রেটিক রেজিমস, কারাগারে কেমন ছিলাম, বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড আফটারম্যাথ ২০০৭-২০০৮ তার উল্লেখযোগ্য বই।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন মওদুদ আহমদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী হাসনা জসিম উদ্দিন মওদুদ, মেয়ে আনা তাসপিয়া মওদুদসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৯মার্চ, ২০২১)