চোরাগোপ্তা পিকেটিং রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত!
দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : বদলে যাচ্ছে হরতালে পিকেটিংয়ের ধরন। দিন দিন সহিংস হয়ে উঠছে পিকেটাররা। রাজনৈতিক ও অপরাধ বিশ্লেষকগণ এ জন্য বিরোধীদলের প্রতি সরকারের কঠোর মনোভাব ও পুলিশের মারমুখি আচরণকেও দায়ী করছেন।
তাদের অভিযোগ সরকার নিজেদের স্বার্থে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যদের দলীয় ক্যাডার বাহিনীর মতো ব্যবহার করে, বিরোধীদলের কর্মীরা বাধ্য হয়েই চোরাগোপ্তা পথে পিকেটিং করছে। যা দেশের রাজনীতির জন্য কোনক্রমেই মঙ্গলজনক নয়।
আবার অনেকেই মনে করছেন, বর্তমানে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা পিকেটিংয়ের নামে পুলিশকে তাদের প্রতিপক্ষ বানাচ্ছে। মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করছে। তাদের এসব কর্মকাণ্ডে বাধ্য হয়েই পুলিশ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি মারমুখি হয়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে গুলি করার মতো কঠিন সিদ্ধান্তও নিচ্ছে।
কয়েকবছর আগেও হরতাল শুরুর আগের দিন সন্ধ্যায় হরতাল সমর্থকরা মশাল নিয়ে হরতালের পক্ষে মিছিল বের করতেন। আগের দিন প্রচার চালাতেন। পরদিন হরতাল সমর্থকরা রাস্তায় নেমে আসতেন, পিকেটিং করতেন। রিকশা বা অন্য যানবাহন চলাচল করলে নেতাকর্মীরা খুব বেশি হলে রিকশার চাকার হাওয়া ছেড়ে দিতেন, যাত্রীদের নেমে যেতে অনুরোধ করতেন। কিন্তু পুড়িয়ে মারতেন না।
বর্তমানে হরতাল সমর্থকরা পিকেটিংয়ের জন্য রাস্তায় নামতে না পেরে দলীয় নির্দেশ ও আনুগত্য দেখাতে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। ফলে হতাহত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে সম্মুখীন হতে হচ্ছে অর্থনৈতিক ক্ষতির। শুধু তাই নয়, পিকেটিংয়ের ধরন দেখে মনে হয়, এসব কর্মকাণ্ড যেন দেশীয় আইনে কোনো নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারি এ প্রসঙ্গে দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, ‘পুলিশের মারমুখি আচরণ ও সরকারের অতিমাত্রায় দমননীতিই এর কারণ। অতীতে হরতালের আগে পুলিশের প্রহরায় হরতাল সমর্থকরা মিছিল বের করতো। জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে মিছিলের শেষ পর্যন্ত পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে সহযোগিতা করতো। কিন্তু বর্তমানে পুলিশ সমর্থকদের রাস্তায় নামতে দিচ্ছে না। ফলে তারা বাধ্য হয়েই লুকিয়ে হামলা করছে। সেজন্য হরতালের পিকেটিংও আগের চেয়ে অনেকটা সহিংস হয়ে উঠছে। যা দেশের রাজনীতির জন্য অশুভ।’
তবে, এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, ‘বর্তমানে রাজনৈতিক দলের পিকেটাররা হরতালে পিকেটিংয়ের নামে যা করছে, তা রীতিমতো ফৌজধারী অপরাধ। একসময় রাজনৈতিক দলগুলো হরতালে মিছিল করেছে। রাজপথে অবস্থান নিয়ে যানবাহনও ভাঙচূর করেছে, কিন্তু যাত্রী ও চালকদের কোনো ক্ষতি করেনি। কিন্তু বর্তমানে পিকেটাররা যাত্রীসহ চালককে পুড়িয়ে মারতেও দ্বিধা করে না।’
দেখামাত্র পিকেটারদের গুলি করার বিষয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘আগে হরতালে সমর্থকরা মিছিল করলে পুলিশ নিরাপত্তা দিতো। বর্তমানে হরতালসমর্থকরা প্রতিপক্ষ হিসেবে সরাসরি পুলিশের প্রতি হামলা করছে। ককটেল নিক্ষেপ করছে। পুলিশকে একা পেয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলছে।’
‘পুলিশ নয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে পুলিশ তাদের প্রতিপক্ষ নয়। রাজনৈতিক বিরোধ বা সমস্যা রাজনৈতিক দলগুলোকেই মেটাতে হবে আলোচনার মাধ্যমে’, বলেন পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার।
(দিরিপোর্ট২৪/টিএস-কেজেএন/এমসি/জেএম/নভেম্বর ১১, ২০১৩)