ভাইবায় ভালো করার খুঁটিনাটি
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: পছন্দের কাজ পাওয়া একটা কঠিন বিষয়। এটা আরও কঠিন যখন আপনি জানেন না নিয়োগ দাতারা আসলে কেমন লোক খুঁজছে। প্রতিষ্ঠান ছোট হোক বা বড়, নিয়োগ পদ্ধতি সবখানেই দ্রুত বদলাচ্ছে। তবে যেকোনো চাকরির জন্য ভাইবা একটি বড় বিষয়। বড় বড় কোম্পানির নিয়োগকর্তারা মনে করেন, যেকোনো চাকরির ক্ষেত্রে ভাইবা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
একজন ব্যক্তির সামনে বা প্যানেলের সামনে মুখোমুখি হয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সামর্থ্য কারও ক্যারিয়ার যেমন গড়ে দিতে পারে, আবার শেষও করে দিতে পারে। তাই আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি নির্ভর করে ভাইবাতে আপনি কতটা ভালো করেন তার ওপর।
কীভাবে ভাইবাতে ভালো করবেন এ বিষয়ে কয়েকটি পরামর্শ প্রদান করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। ঢাকাটাইমস পাঠকদের জন্য সেটি তুলে ধরা হলো।
গবেষণা করুন
কারা আপনার ভাইবা নেবেন, তাদের পদবী কী, তারা কেমন- তাদের সম্পর্কে যতটা সম্ভব জেনে নিন। যে প্রতিষ্ঠানে আপনি কাজ করতে চাইছেন সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। প্রতিষ্ঠানটি কি নিয়ে কাজ করে, এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী, এর স্বত্বাধিকারী কে বা কারা, বছরে তাদের আয়-ব্যয় কেমন, অর্থনৈতিক অবস্থা কী, প্রতিষ্ঠানটির মূল প্রতিযোগী কারা- এসব জানুন।
বর্তমানে এসব জানার একটা ভালো উপায় হল ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট। সেটি ঘেঁটে নোট নিন, নিয়োগকর্তাদের নামগুলো জেনে নিন এবং কিছু প্রশ্ন তৈরি করুন।
ভাইবার শেষ পর্যায়ে যখন আপনাকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হবে তখন এমনভাবে প্রশ্ন করুন যাতে আপনার সাক্ষাৎকার গ্রহীতারা বুঝতে পারে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনি বেশ ভালোভাবে জানেন।
যেখানে কাজ করতে যাচ্ছেন তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা থাকলে আপনার জন্য ভাইবা দেয়া সহজ হবে। আপনি সহজেই তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন আর আত্মবিশ্বাসীও থাকবেন।
অনুশীলনের বিকল্প নেই
কথায় আছে- প্র্যাকটিস মেকস আ ম্যান পারফেক্ট অর্থাৎ অনুশীলনই একজন মানুষকে ত্রুটিহীন করে। আপনাকে কী ধরনের প্রশ্ন করা হতে পারে তার একটি তালিকা তৈরি করুন এবং সম্ভাব্য উত্তরগুলোও ভেবে নিন।
আপনি যদি বুঝতে না পারেন আপনাকে কী ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হতে পারে, ইন্টারনেটের সাহায্য নিন। ইন্টারনেটে এমন হাজারো ওয়েবসাইট আছে যেখানে ভাইবাতে সাধারণত কেমন প্রশ্ন করা হয়ে থাকে সেগুলোর নমুনা উত্তরসহ পাওয়া যায়।
আপনার উত্তরগুলো থিওরির মতন না হয়ে গল্পের মতন হওয়া ভালো। চাকরির ক্ষেত্রে যেসব যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে সেগুলো যে আপনার আছে সেটি গল্পের ছলে বলুন। ‘আমি এ সব কাজ পারি’ এভাবে না বলে কাজের উদাহরণ দিতে পারেন।
কখন, কোথায়, কীভাবে আপনি আপনার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা জানান। এতে আপনার আগের কর্মক্ষেত্রে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন সেটি যেমন বোঝা যাবে, তেমনি সাক্ষাতকার গ্রহীতারা বুঝতে পারবে নতুন কাজের ক্ষেত্রে আপনি কতখানি যোগ্য।
পোশাকের দিকে খেয়াল রাখুন
আগে দর্শনধারী, তারপর গুণ বিচারি- পুরনো হলেও এ কথা এক্ষেত্রে বেশ প্রযোজ্য। বুদ্ধিমান নিয়োগকর্তারা ভাইবা শুরুর তিরিশ সেকেন্ডের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। আপনি যতই ভালো ভাইবা দিন না কেন, আপনার পোশাক পরিচ্ছদ দেখে তারা যদি বিরক্ত হন, তাহলে আদতে কোনো লাভ হবে না।
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ভার্জিনিয়া ইস্টম্যান নামের এক সাবেক নিয়োগ বিশেষজ্ঞ একটা মিডিয়া কোম্পানিতে ভাইবা দিতে আসা এক চাকরি প্রার্থীকে নিয়ে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন এভাবে-
‘ও রুমে ঢোকার তিন মিনিট আগেই ওর শরীর ও মুখের তীব্র দুর্গন্ধ আমাদের রুমে ঢুকেছিল। ওর পোশাক-পরিচ্ছদ তো খারাপ ছিলই, ঠোঁটের কোণায় খাবারের অংশ লেগেছিল, আর মোজা থেকে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। আমি জীবনে কখনো কাউকে ওরকম বিশ্রীভাবে চুল আঁচড়াতে দেখিনি। বলাই বাহুল্য যে ওই বেচারা চাকরিটা পায়নি।’
আপনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য যাবেন, হতেই পারে তারা পোশাক নিয়ে অত মাথা ঘামায় না। তবুও তারা এটা অন্তত আশা করে না যে, ভাইবাতে আপনি জিন্স পরে যাবেন। খালি চোখে দেখতে আরাম লাগে এমন পোশাক পরুন।
নিয়োগ বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে সাদা রঙকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। রঙিন, জবড়জং পোশাকের চেয়ে হালকা রঙের পোশাক পরাই ভালো। তবে পোশাকের রঙ যাই হোক, সাদা বা নীল, অবশ্যই তা যেন কুঁচকানো না হয়। ভাইবার পোশাক হতে হবে পরিষ্কার এবং পরিপাটি।
হ্যান্ডশেক করুন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে
চাকরির ক্ষেত্রে বুদ্ধিমান নিয়োগকর্তারা কিন্তু হ্যান্ডশেকের ধরন দেখেও অনেককিছু বিবেচনা করেন। সাধারণত প্রার্থী ভাইবা রুমে ঢোকার পরে প্রথমেই এটি হয়ে থাকে। একজন ইতিবাচক, আত্মবিশ্বাসী এবং পেশাদার লোক কখনোই কাঁপা কাঁপা, নিস্তেজ হাতে করমর্দন করবে না।
আবার হ্যান্ডশেকের সময় খুব বেশি শক্ত করেও হাত ধরা যাবে না। তাতে মনে হবে আপনি অন্যের ওপর জোর খাটাতে ওস্তাদ বা ব্যক্তি হিসেবে আপনি আক্রমণাত্মক এবং কর্তৃত্ববাদী।
দরকার হলে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে করমর্দন করার অনুশীলন করে নিন। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন হ্যান্ডশেকের সময় আপনি তাদের হাতে বেশি চাপ দিচ্ছেন বা একেবারেই আলতো করে হাত ধরছেন কিনা। ঠিকভাবে হ্যান্ডশেক করা অনুশীলন করুন।
ভাইবার সময় যার সঙ্গে কথা বলছেন অবশ্যই তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন। অন্যদিকে তাকানো বা নিচের দিকে তাকিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলাটা এক ধরনের অভদ্রতাই। পকেটে বা ব্যাগে অবশ্যই টিস্যু রাখবেন! মনে রাখবেন- ঘামে ভেজা হাত ধরতে কেউ পছন্দ করে না!
হাসুন
যখন আপনার মাথার ভেতর অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, বুক ঢিপঢিপ করছে, নানা আশঙ্কায় নিজের নামই ভুলে যাওয়ার দশা- তখন হাসাটা অবশ্য একটু কঠিনই। তবে হাসিমুখ হল একটা বিশ্ব স্বীকৃত ভঙ্গি যা দ্বারা আপনি সহজেই বোঝাতে পারেন- ‘আমি দিলখোলা মানুষ এবং আমি এখানে আসতে পেরে খুশি’। তাই দরজায় প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই মুখে হাসি রাখুন, হাসিমুখে প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিন।
বডি ল্যাংগুয়েজের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন, ভাইবার সময় কখনো কাত হয়ে বসবেন না। সবসময় সোজা হয়ে বসুন।
নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অ্যাড্রেনালিন আপনাকে যেমন সাফল্য এনে দিতে পারে, তেমনি ঘটাতে পারে সর্বনাশও। আপনি হয়ত সব ধরনের প্রস্তুতিই নিয়ে গেলেন, কিন্তু নার্ভাসনেসের কারণে ভাইবার সময় সবকিছুই ভুলে গেলেন কিংবা এমনভাবে আপনার হাত ঘামতে শুরু করল যে বন্ধুদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক অনুশীলন করাটা কোন কাজেই এলো না!
যদি আপনার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটবার আশঙ্কা থাকে, তাহলে ইন্টারভিউ রুমে ঢুকবার আগে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিন।
মনে মনে ছক কষে নিন ভেতরে গেলে কি করবেন। অ্যাড্রেনালিনকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে সেটা কিন্তু আপনাকে ভালো ভাইবা দিতে সাহায্যই করবে।
বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে বলেন যে, ভাইবার সময় ঘাবড়ে না গিয়ে আপনার প্রস্তুত করা উত্তরগুলোর দিকে মনোযোগ দিলে ভাইবা ভালো হয়।
ক্যারিশমাটিক হোন
একটি ছোট কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মালিক ডার্মট রুনি বলেন, ‘মুখোমুখি সাক্ষাৎকার আসলে একটি সুবর্ণ সুযোগ নিজেকে আরেকজনের কাছে তুলে ধরার। এখানে আপনি আরেকজনকে নিজের ব্যাপারে ভালো ধারণা দেবার সুযোগ পান, বলতে পারেন আপনার ঝোঁক বা প্যাশন কোনদিকে।’
তাই ভাইবা দিতে যাবার আগে ভাবুন, আপনার সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য কোনটি? আপনার ব্যক্তিত্ব ও রুচি নিয়ে ভালো করে ভাবুন। ভেবে দেখুন কোন কোন কারণে আপনি অন্যদের চেয়ে আলাদা। সেই সঙ্গে কাজের বিষয়ে জোর দিতে ভুলবেন না।
আপনি কেন কাজটি চান, আপনি কতটা পছন্দ করেন এ কাজ, কাজটি পেলে আপনি কতটা উপকৃত হবেন- এ বিষয়গুলো বারবার বলবেন। আপনার এ কথাগুলো পরীক্ষকের মতামতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
খেই হারাবেন না
পরীক্ষকের প্রশ্ন শুনে যদি আপনার মনে হয় আপনি অথৈ সাগরে পড়েছেন, কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না, এই চাকরি পাবার কোনো সম্ভাবনাই আর নেই- তবু ঘাবড়ে যাবেন না।
আপনার মনে হতেই পারে যে তারা আপনাকে পছন্দ করছে না কিংবা এ কাজ পাবার কোনো আশা নেই, তবু ভাইবা শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়বেন না। কে জানে হয়ত পরের প্রশ্নটির উত্তরই আপনি খুব ভালোভাবে দিতে পারবেন! তাই ঘাবড়ে না গিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সব প্রশ্ন মোকাবেলা করুন।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৮ মার্চ, ২০২১)