মিথ্যা বলেছেন নান্নু-বাশার: মাশরাফী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশের মানুষের কাছে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা একটি বিশেষ নাম। যার সাথে জড়িয়ে এদেশের কোটি ভক্তের আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসা। ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের দিনই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন সেদিনের তগবগে তরুণ কৌশিক। নিয়েছিলেন চারটি উইকেট। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ম্যাশের। তবে ২০ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তার আসল যুদ্ধটা ছিল ইনজুরির সাথে, বহুবার যেতে হয়েছে অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে। কিন্তু হাল ছাড়েননি। বল হাতে দাপিয়ে বেরিয়েছেন গোটা বিশ্বে।
মাশরাফীকে নিয়ে এসব তথ্য তুলে ধরার কারণ নিশ্চয়ই কিছুটা ধারণা করতে পারছেন, তার অবসর ঘিরে চলছে নানা আলোচনা আর বিতর্ক। যার শুরুটা হয়েছিলো টি-টোয়েন্টি দিয়ে। এরপর আসে ওয়ানডের অধিনায়কত্ব ছাড়া। বাদ পড়েন ওয়ানডে দল থেকে। দেশের অন্যতম সফল এক ক্রিকেটারের কেন এমন সমাপ্তি? বিসিবি থেকে বার বার বলা হয়েছে ফিট নন মাশরাফী। সত্যি কি তাই? নাকি পেছনে আছে অন্য কোনো গল্প।
যমুনা টেলিভিশনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা বলেছেন তার সাথে ঘটে যাওয়া কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা। মাশরাফী বলেছেন, আমাকে ওয়ানডে থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, সেটা হতেই পারে, গেল বিশ্বকাপে আমার পারফরমেন্স খারাপ ছিল, সেটাও আমি মেনে নিলাম। তবে নির্বাচকরা যখন বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে আমার ফিটনেস নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন তখন আমি বিষয়টা মেনে নিতে পারছিলাম না। সেই সাথে এই ঘটনায় সামাজিকভাবেও আমি হেনস্তা হয়েছি এবং হচ্ছি। সামনে তামিম ,মুশফিক, সাকিব, রিয়াদ এরা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অবসরে চলে যাবে, কিন্তু আমি চাই না তারা যেন আমার মতো এমন অপমান অপদস্থ হোক।
এরপরেই মাশরাফীর সামনে যমুনা টেলিভিশন ছুড়ে দেয় প্রশ্ন, দল থেকে বাদ পড়ার ২ মাস পরে কেন মুখ খুলছেন আপনি? মাশরাফীর উত্তর, যতদিন আমি বোর্ডের আওতায় ছিলাম, বিসিবির বেতন ভুক্ত ক্রিকেটার ছিলাম ততদিন আমি কোনো কথাই বলিনি। তবে এখন আমি বোর্ডের বেতনভুক্ত খেলোয়াড় নই, তাই আমার না বলা কথাগুলো বলতে কোনো বাধা নেই।
উইন্ডিজ সিরিজে মাশরাফীকে দল থেকে বাদ দেওয়ার পর জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচকরা নানা সময় দেখিয়েছেন নানা কারণ। সিরিজ শুরুর আগে এবং সিরিজের মাঝে সাবেক ক্যাপ্টেনকে দল থেকে বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে কখনো দেখানোর চেষ্টা করেছেন বিশ্বকাপে খারাপ পারফরমেন্স, কখনো আবার মাঠে নেমে খেলার মতো ফিটনেস নেই মাশরাফীর সেটাও প্রমাণের চেষ্টা হয়েছে সবার সামনে। এই সব ভুল তথ্য প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে মিডিয়াও। তাই আর চুপ না থেকে মাশরাফী বলেন, আমাকে বাদ দেওয়া বা দলে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া নির্বাচকদের অধিকার, কিন্তু মিথ্যা কথা বলে সেটাকেই প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টার মানেটা কী? তারা বারবার বলছেন মাশরাফীর সাথে কথা বলেই তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আসলে তো সেটা সত্যি না।
অনেক সিনিয়র ক্রিকেটারও বিভিন্ন টক শো’তে গিয়ে বলছেন, যেহেতু মাশরাফী তার বাদ পড়ার ব্যাপারটি জানেন তাহলে তো তাকে বাদ দেওয়ার প্রসেস ঠিকই রয়েছে। মাশরাফী বলছেন, আপনারা আমাকে বাদ দিয়েছেন ভালো কথা। প্রথমে যে কারণ দেখিয়েছিলেন বিশ্বকাপে ভালো করি নাই, তাই দল থেকে বাদ পড়েছি। এসব বিষয় এতদিন আমি হজম করে এসেছি কিন্তু আর কত? এখন তো মুখ না খুলে আর কোন উপায় নেই।
বেশ কয়েকদিন হলোই এসব ইস্যু নিয়ে মাশরাফী প্রতিনিয়ত কথা বলে যাচ্ছেন গণমাধ্যমের সাথে, যমুনা টেলিভিশনের প্রশ্ন ছিল বিসিবির থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন কিনা?
মাশরাফীর সোজা উত্তর কোনো রিঅ্যাকশনের আমায় আমি এসব করছি না। তারা কি করবে, কি করবে না সেটা তাদের বিষয়। আপনি কি এখনও জাতীয় দলে খেলতে চান, এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে ম্যাশ বললেন, ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা রয়েছে এবং খেলবো। গেল ২০ বছর ক্রিকেট খেলেছি, ক্রিকেটটাকে ভালোবাসি, তাই ক্রিকেটে তো থাকতেই হবে।
টাইগারদের সেরা ক্যাপ্টেনের কাছে এবার জানতে চাওয়া হলো অবসরে যাচ্ছেন কবে? এই প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফী বললেন, এই বিষয়ে তো দুই পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে, কোচ বা নির্বাচকরা আমাকে ডেকে বলতেই পারতেন যে সামনের ওই সিরিজ বা ম্যাচ রয়েছে সেটা খেলে তুমি অবসরে যেতে পারো। যদি তুমি অবসর না নাও সেটা তোমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। ২০২৩ বিশ্বকাপে তোমাকে দেখছি না আমরা। ম্যাশের পাল্টা প্রশ্ন, আপনারা কি এখনও শুনেছেন বা দেখেছেন যে বোর্ডের কেউ আমাকে নিয়ে বসেছে বা আমাকে ডেকেছে এসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা করার জন্য?
মাশরাফী-বিসিবি এই দ্বন্দ্বের শেষ কোথায় তা অজানা। তবে মাশরাফী ও সাকিবের মতও সিনিয়র ক্রিকেটের বক্তব্যের প্রভাব যে পড়বে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেটা কিন্তু বোঝা যাচ্ছে স্পষ্টই।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৬ এপ্রিল, ২০২১)