মুন্সিগঞ্জে পৌর মেয়রের বাসায় বিস্ফোরণে আহত ১২
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: মুন্সিগঞ্জ মীরকাদিম পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুস সালামের বাসায় বিস্ফোরণে দগ্ধ ১২ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে মেয়রের স্ত্রী কাননের (৩৭) অবস্থায় আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। মেয়র ও তার বড় ছেলে আল হাসেম পাপ্পু (৩০) হালকা আহত হয়েছেন। তবে তারা বাসাতেই আছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আহতরা অভিযোগ করেছেন পরিকল্পিত ভাবে এ বিস্ফোরণ ঘটনানো হয়েছে।
এ ঘটনায় সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সোহেল, প্যানেল মেয়র ১ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রহিম বাদশা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. সাইফুল আযম খান বলেন, আমাদের এখানে ১২ জন দগ্ধকে নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে কানন নামে এক নারীকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। তার শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাকি ১০ জনের শরীরে ২০ শতাংশের কম করে দগ্ধ। তাদেরকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, চিকিৎসাধীন দগ্ধ অন্যরা হলেন - ২ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ও প্যানেল মেয়র আওলাদ হোসেন (৪০), ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার হাজী দ্বীন ইসলাম (৬০), পৌরসভার সচিব সিদ্দিকুর রহমান (৩৮), মেয়রের পিএস যুবলীগ কর্মী মো. তাজুল ইসলাম (২৬), মো. হোসেন কালু (৫০), আমিন আহ মাইনুদ্দিন (৪৫), পৌরসভা অফিসের নিরিপত্তা কর্মী মো. মনির হোসেন (৪৮), নৈশ্য প্রহরী শ্যামল চন্দ্র দাস (৪৫), মেয়রের কর্মী মোশারফ হোসেন (৪০) (বারডেম হাসপাতালের অফিস সহকারী)।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি দুই নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার আওলাদ হোনের গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২ টার দিকে বলেন, মীরকাদিম পৌরসভার সাবেক মেয়র শরিফুল ইসলাম সাহিন। রাতের অন্ধকারে পৌরসভার কেয়ারটেকার (তত্বাবধায়ক) মনির হোসন একটি খাতা নিয়ে এই সাবেক মেয়রের কাছে যাচ্ছিল। এসময় আমাদের বর্তমান কমিশনার দ্বীন ইসলাম সাহেব খাতা আটকায়।
তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে কেনো খাতা নিয়ে যাচ্ছো। পরে পৌরসভাতে খাতা রাখে সে। এরপর বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের খবর দেয় দ্বীন ইসলাম। আমি প্যানেল মেয়োর এক আব্দুর রহিম বাসারকে নিয়ে পৌরসভাতে আসি। সেখানে গিয়ে বলি এই খাতা পৌরভাতে রাখলে চুরি হতে পারে, আমরা বর্তমান মেয়র সাহেবের বাসায় নিয়ে যাবো। পরে মেয়রের বাসায় এই খাতা নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, বাসায় গিয়ে মেয়রের সাথে (হাজী আব্দুস সালাম) কথা বলি। বুধবার আমাদের পৌরসভার স্টাফ নির্বাচন। মেয়র সাহেব বলেন খাতাগুলো কালকে দেখব না। কাল নির্বাচন শেষে পরশুদিন খাতা দেখব। খাতার ভেতরে কি আছে তখন দেখব। এসময় কেয়ারটেকারের সাথে রাতে খাতা নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়ায় আমাদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে আমরা বলি, মেয়র সাহেব যা করার করবেন। সবায় চুপ হয়ে যায়। মেয়র সাহেব আমাদের আপ্পায়ন করছিলেন, ফল খেতে দিছিলেন। এই মুহুর্তে বিকট শব্দ হয়। ঘরের ভেতরে আগুন চলে আসে। আমরা যে যেভাবে পারি পলায়ছি। সেকেন্ডের মধ্যে সমস্ত ফ্লোর আগুনে ঝলসে যায়। সবার পা গুলো পুড়েছে এ কারণে। এটি পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে।
চিকিৎসাধীন দগ্ধ পান্না হালদার (৫০) জানান, তিনি পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার সেকশনে কাজ করেন। তার বাসা সদরেই। অফিসিয়াল কাজে তিনি সন্ধ্যায় মেয়রের বাসায় গিয়েছিলেন। এসময় আরো ৪-৫ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, অফিস স্টাফ ও কর্মীরাও ছিলেন। তখনই ৪ তলা বাসাটির ৪ তলাতে হঠাৎ বিকট আওয়াজে বিস্ফোরণ ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে রুমের ভিতরে থাকা তারা সবাই কম বেশি দগ্ধ হন।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৭ এপ্রিল, ২০২১)