আব্দুল্লাহ শুভ, দ্য রিপোর্ট:দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইজের গন্ডিতে আটকে লেনদেনে অংশ নিতে না পারা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬৬ টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইজ প্রত্যাহারের  ঠিক পরের দিনই পুঁজিবাজারে পতন দেখা গেছে। লকডাউনের প্রথম তিন দিন পুঁজিবাজার টানা উত্থানে থাকায় এবং ফ্লোর প্রাইজ নিয়ে  সিদ্ধান্ত আসার পরদিনই এমন পতন দেখা যাওয়ায় বিনিয়োকারীদের মধ্যে আতংক দেখা যাচ্ছে। তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা স্বাভাবিক বিষয়। এতে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই।

 

 

 

বৃহম্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৮২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে। অন্য সূচক গুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে যথাক্রমে ১ হাজার ১৯৭ এবং ১ হাজার ৯৯০ পয়েন্টে।

আজ লেনদেন ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ১০৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট কম লেনদেন হয়েছে। বুধবার ডিএসইতে টাকার অংকে লেনদেন হয়েছিল ৫৮২ কোটি ৫২টাকার শেয়ার ও ইউনিট। আজ লেনদেন হয়েছে ৪৭৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ কোম্পানির দরও কমেছে।

অথচ, লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই পুঁজিবাজারে উত্থান শুরু হয় ।গত তিন দিনে ডিএসইএক্স বাড়ে ২৪৬ পয়েন্ট। পুঁজিবাজারে আরও গতি আনতে এই উত্থানের মধ্যেই ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইজ তুলে দেয় কমিশন। এতে বিনিয়োগকারীরা আতংকিত হয়ে পড়েন। আতংকে শেয়ার বিক্রি করার হিড়িক দেখা যায়। এর ফলেই বৃহস্পতিবার ধারাবাহিক উত্থান পর্ব থেকে পতন পর্বে মোড় নেয় শেয়ারবাজার।

এদিকে, বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন ‍কমিশনের ফ্লোর প্রাইজ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিলো। এবং বাজারের গতি বাড়াতে এটিই সঠিক পদক্ষেপ। বিনিয়োগকারীরা অহেতুক আতংকিত হয়ে এই পতনের নেতৃত্ত্ব দিচ্ছে। অথচ, টানা তিনদিনের বড় উত্থানকে সমন্বয় করতে এমন পতন হওয়াই স্বাভাবিক। এতে বিনিয়োগকারীদের আতংকিত হওয়া চলবে না।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোকেও ফ্লোর প্রাইজে আটকে রেখে বাজারে একটা অস্থির ভাব জারি রাখার ফল এমনিতেও শুভ না। এতে বিনিয়োগকারীদের স্বাধীনতা খর্ব হয়।

বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরু থেকেই বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমতে থাকে। তবে সদ্য, ফ্লোর প্রাইজ প্রত্যাহার হওয়া ৬৬ টি কোম্পানির অধিকাংশেরই দর কমেছে তরতর করে। এদিন লেনদেন শেষে দর কমায় শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকাতেও চলে আসে এসব কোম্পানি। দেখা গেছে, দর কমার তালিকায় থাকা এএফসি অ্যাগ্রোর দর ১৭ টাকা থেকে ১ টাকা ৭০ পয়সা কমেছে। অর্থ্যাৎ ১০ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ১৫ টাকা ৩০ পয়সায়। অন্যদিকে, এম এল ডাইং, সেন্ট্রাল ফার্মা ও কুইন সাউথ লিমিটেডেরও দর কমেছে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হারে।দর কমার তালিকায় শীর্ষ দশ কোম্পানির সব কয়টি কোম্পানির দর কমেছে ৯ শতাংশের উপর।

এ বিষয়ে বাজার বিশ্লেষক মাহবুব মজুমদার দ্য রিপোর্টকে বলেন,‘রিটেইল ইনভেস্টরদের অস্থির আচরণের জন্যই আজকে এ পতন দেখা গেল।লকডাউন,করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং সর্বশেষ ফ্লোর প্রাইজ নিয়ে এই রিটেইল ইনভেস্টররা আতংকিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এটা ঠিক হচ্ছেনা। এটা তাদের অস্থির ব্যবহার এবং এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারাই। ২০২০ সালের মার্চে যে অবস্থা ছিল তখন ফ্লোর প্রাইজ বেঁধে দেওয়ার যুক্তিসংগত কারণ ছিলো। গতকাল এটি তুলে দেওয়ার পেছনেও যুতসই কারন আছে। সারা পৃথিবীর মার্কেট করোনার মধ্যে যে পতন দেখেছিলো সে অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরাও দাঁড়িয়েছি। আমরা বলতেই পারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবার বাজারে তেমন অস্থিরতা তৈরি করতে পারবে না। আর,ফ্লোর প্রাইজ তো কোন স্বাভাবিক বাজারে দীর্ঘদিন বলবৎ থাকতে পারেনা। তাই ফ্লোর প্রাইজের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্থ করার পাশাপাশি বাজারকেও অস্থির না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন- ৬৬ কোম্পানির বাজারহিস্যা মাত্র ৫ শতাংশ তাই এখানে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই’।

অন্যদিকে,বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন,সূচকের পতনে আতংকিত হয়ে যারা বাজার অস্থির করে তোলেন তাদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের প্রয়োজনই নেই।

দ্য রিপোর্ট/এএস/৮ এপ্রিল ২০২১