বিপ্লবী চে গুয়েভারা
তার পুরো নাম এর্নেস্তো গুয়েভারা রোসারিও। ১৯২৮ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তার বাবা এর্নেস্তো গুয়েভারা লিঞ্চ ছিলেন স্পেনীয় গৃহযুদ্ধের রিপাবলিক পক্ষের গোঁড়া সমর্থক। রিপাবলিক যোদ্ধারা নিয়মিত তাদের বাড়িতে যাতায়াত করত। এভাবে ছোটবেলা থেকে তিনি বিপ্লবী আদর্শের সাথে পরিচিত হন।
চে ১৯৪৮ সালে বুয়েনস এয়ারস বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাশাস্ত্রে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে লেখাপড়ায় এক বছর বিরতি দিয়ে আলবার্টো গ্রানাডো নামের এক বন্ধুর সঙ্গে মোটর সাইকেলে দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। উদ্দেশ্য ছিল পেরুর সান পেবলোর লেপার কলোনিতে (কুষ্ট রোগীদের জন্য বিশেষ কলোনি) স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা। এই ভ্রমণে তিনি আর্জেন্টিনা, চিলি, পেরু, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, পানামাসহ দক্ষিণ আমেরিকার সামাজিক অবস্থার সাথে পরিচিত হন| সে সূত্র ধরে তিনি গুয়েতেমালার প্রেসিডেন্ট জ্যাকবো আরবেনেজের সাথে সংস্কারমূলক কাজে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালে বন্ধু রাউল কাস্ত্রোর মাধ্যমে তার ভাই ফিডেল কাস্ত্রোর সাথে পরিচিত হন। পরবর্তীতে চে তাদের সাথে কিউবার ‘ছাব্বিশ জুলাই আন্দোলনে’ যোগ দেন। কিউবা যাওয়ার পথে গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন। অবশেষে কিউবা বিপ্লবে ফিডেল কাস্ত্রোর জয়ের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
বিপ্লব ছড়িয়ে দিতে তিনি কঙ্গো ও বলিভিয়ার গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বলিভিয়াতে গুয়েভারাকে ৭ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়। তার মৃত্যু হয় ৯ অক্টোবর ১৯৬৭ সাল বেলা ১.১০ টায়। মৃত্যুর সময়কাল, ধরণ নিয়ে মতভেদ এবং রহস্য রয়ে গেছে। ধারণা করা হয় ১৯৬৭ সালের এই দিনটিতে লা হিগুয়েরা নামক স্থানে নিরস্ত্র অবস্থায় নয়টি গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। একই সাথে বলা হয়, সে হত্যাকাণ্ডের সময় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চে গুয়েভারা চে নামেই বেশি পরিচিত। চে’র স্বাক্ষর ও চিত্রশিল্পী আলবের্তোকোর্দার তোলা ’গেরিলেরো হেরোইকা’ ছবিটি সাংস্কৃতিকভাবে তরুণদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
চে লেখালেখিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন, নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। স্বনামে এবং ছদ্মনামে তিনি প্রায় ৭০টি নিবন্ধ লিখেছেন। এছাড়া তিনি লিখে দিয়েছেন পাঁচটি বইয়ের ভূমিকা। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত ভাষণ আর সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রায় ২৫০-এর কাছাকাছি। বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে লেখা তার অসংখ্য চিঠির মধ্যে সংগৃহিত আছে ৭০টির মতো। তার লেখালেখি নিয়ে এখন পর্যন্ত বের হয়েছে নয় খণ্ড রচনাবলি। তার রচনার অনেকগুলো বাংলায় অনুদিত হয়েছে। এরমধ্যে মোটর সাইকেল ডায়েরি, বলিভিয়ার ডায়েরি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তার জীবনী নিয়ে বেশক’টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।
(দিরিপোর্ট২৪/ডব্লিউএস/এইচএসএম/অক্টোবর ০৯, ২০১৩)