কী একটা সপ্তাহই না পার করলো পুঁজিবাজার !
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:জম্পেস একটা সপ্তাহ পার করলো দেশের পুজিঁবাজার। কী সূচক,কী লেনদেন কিংবা শেয়ারের দর! সব যায়গাতেই রমরমা অবস্থা যেন! এ সপ্তাহেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই ) গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। তেমনি সূচকেরও ভাঙছে একের পর এক রেকর্ড ।পাশাপাশি অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর যেমন বেড়েছে, সপ্তাহ শেষে পুঁজিবাজারে মূলধনও ফুলেফেঁপে উঠেছে ।সবমিলিয়ে এমন পুঁজিবাজারেই যেন আস্থা রাখতে চায় বিনিয়োগকারীরা।
গত ৯ জুন বুধবার ডিএসইতে দুই হাজার ৭০০ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। যা গত সাড়ে ১০ বছরের মধ্যে ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন এবং সর্বকালের সর্বোচ্চ লেনদেন থেকে মাত্র ১০ কোটি টাকা কম। এর আগে এর আগে ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর ডিএসইতে ২ হাজার ৭১০ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। সবকিছু ছাড়িয়ে লেনদেন তিন হাজার কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করা যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র !
গত সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ৫১কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট ।এ সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে দুই হাজার চাঁরশো ৭ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট। অর্থ্যাৎ, সপ্তাহের ব্যবধানে গড় লেনদেন বেড়েছে প্রায় চারশো কোটি টাকা যা গত সপ্তাহের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি।
এদিকে ডিএসইতে সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে । গত সপ্তাহে ৩৭৫ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়।এর মধ্যে দর বাড়ে ১৯৩টির, দর কমে ১৩০টির এবং দর অপরিবর্তিত থাকে ৪৯টি কোম্পানির।অন্যদিকে, এ সপ্তাহেও সমান সংখ্যাক কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়। এদের মধ্যে দর বেড়েছে ২১১টির দর কমেছে ১৪২ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮ টি কোম্পানির।
এ সপ্তাহে সূচকেও উত্থান দেখা গেছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ছয় হাজার তিপ্পান্ন পয়েন্ট নিয়ে সপ্তাহ শুরু করে, শেষ হয় ছয়হাজার ৬৬ পয়েন্টে।অর্থ্যাৎ, সপ্তাহের ব্যবধানে সূচকটি ১৩ পয়েন্ট বেড়েছে। সপ্তাহের গড় সূচক দায়িয়েছে ২৩২০ পয়েন্টে। এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই- ৩০ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ২২০৫ পয়েন্টে ।এবং শরীয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১২৯৯ পয়েন্টে।
আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে বাজার মূলধনের পরিমানও বেড়েছে।পাঁচ লক্ষ আট হাজার নয়শো সাতচল্লিশ কোটি টাকার মূলধন নিয়ে শুরু হওয়া সপ্তাহ শেষ হয় পাঁচ লক্ষ নয় হাজার নয়শো সাঁইত্রিশ কোটি টাকার মুলধন নিয়ে।অর্থ্যাৎ ,সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা ।
তবে সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিওর কোন পরিবর্তন হয়নি।গত সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৮.৪৮ পয়েন্ট।এ সপ্তাহেও পিই রেশিও একই অবস্থানে আছে।
গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর অস্বাভাবিক উত্থান দেখা গেছে।কারসাজি করেই এটি করা হচ্ছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। গত একবছরে প্রভাতি ইন্সুরেন্সের শেয়ারের মূল্য সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।২০২০ সালের ৯ জুন কোম্পানির শেয়ারের দর ছিলো মাত্র ১৯ টাকা ৪০ পয়সা যেটা এবছরের ৮ জুন গিয়ে দাড়িয়েছে ১৯০ টাকা ৬০ পয়সায়।অর্থ্যাৎ এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার বেড়েছে ৮৮২ শতাংশ যা অস্বাভাবিক।
অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে এমন ১৫টি কোম্পানির অন্য কোম্পানিগুলো হলো -বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স (৬৮৮ শতাংশ ),বেক্সিমকো লিমিটেড (৫৮৫ শতাংশ) এশিয়া ইন্সুরেন্স (৫৩৫ শতাংশ ), পাইওনিয়ার ইনস্যুরেন্স (৫১৪ শতাংশ),বিডি ফাইনান্স (৪৫৮শতাংশ ),ঢাকা ডায়িং (৪৩৮ শতাংশ ), গ্লোবাল ইন্সুরেন্স (৪৩৬ শতাংশ ), ফেডারেল ইন্সুরেন্স (৪৩৬ শতাংশ ), ঢাকা ইন্সুরেন্স (৩৬৯ শতাংশ ), ইষ্টার্ণ ইন্সুরেন্স (৩২৯ শতাংশ ), পূরবী জেনারেল ইন্সুরেন্স (৩১০ শতাংশ ), ন্যাশনাল ফিড মিল (৩০৬ শতাংশ ),নর্দান ইন্সুরেন্স (২৯০ শতাংশ ) এবং প্রাইম ইনস্যূরেন্স (২৮৫ শতাংশ)।
সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড।লেনদেনের শীর্ষে থাকা সেরা দশ কোম্পানির মধ্যে অন্য কোম্পানিগুলো হলো– লংকা বাংলা ফাইনান্স, পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স, ফরচুন সুজ,ন্যাশনাল ফিড মিল লিমিটেড,সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স,ইফাত অটোস,সোনার বাংলা ইন্সুরেন্স, এনআরবি গ্লোবাল লিমিটেড ও গ্লোবাল ইন্সুরেন্স লিমিটেড ।
এ সপ্তাহে টপ গেইনার তালিকার শীর্ষে রয়েছে-ফরচুন সুজ লিমিটেড।তালিকার শীর্ষ দশের অন্য কোম্পানিগুলো হলো- কপারটেক ইন্ড্রাট্রিজ,রিংশাইন ,আলিফ ইন্ড্রাট্রিজ লিমিটেড, সাফকো স্পিনিং মিলস, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লি:, নুরানি ডাইং এন্ড সোয়েটার লিমিটেড,দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড,আনোয়ার গ্যালভানাইজিং লি: এবং পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ।
ন্যাশনাল ক্রেডিট এন্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড সপ্তাহের লুজারের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। শীর্ষ দশ লুজারের অন্য কোম্পানিগুলো হলো– সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড,ইসলামি ইন্সুরেন্স বিডি লিমিটেড,এক্সিম ব্যাংক,জনতা ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড,এবি ব্যাংক, ফোনিক্স ইন্সুরেন্স,ফার্স্ট সিকিউরিটি ইন্সুরেন্স লিমিটেড,জিবিবি পাওয়ার লিমিটেড,নর্দান ইসলামী ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
দ্য রিপোর্ট/এএস/১০জুন,২০২১