আব্দুল্লাহ শুভ,দ্য রিপোর্ট: প্রয়োজনীয় কাঠামো ও শিক্ষা উপকরণ নিশ্চিত না করে  নতুন নতুন বিভাগ চালু করায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিভাগগুলোতে বেহাল দশা বিরাজ করছে। বছরের পর বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ, শিক্ষক, সেমিনার, ল্যাব, ব্যাবহারিক কাজের যন্ত্রপাতির অভাবে হিমশিম খাচ্ছে বিভাগগুলো ।

 

 

 

জানা যায় ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে জাবিতে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন, পাবলিক হেলথ, এবং আইন ও বিচার শিরোনামে তিনটি নতুন বিভাগ চালু হয়। পরের বছর যাত্রা শুরু করে চারুকলা বিভাগ।

আইন ও বিচার বিভাগে বর্তমানে পাঁচটি ব্যাচে কমপক্ষে তিনশ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিভাগের স্থায়ী ক্লাসরুম মাত্র একটি। ফলে এক ব্যাচ ক্লাস করে বের হলে অন্য ব্যাচ ক্লাস করার সুযোগ পায়। ক্লাসরুম সংকটের কারণে প্রায়ই বিকেল ৩টা ৪টার দিকে ক্লাস করতে হয়। এছাড়া পাঁচটি ব্যাচের জন্য শিক্ষক রয়েছেন ছয়জন। বাকিটা চলছে ‘গেস্ট টিচার’ দিয়ে।

আইন ও বিচার বিভাগের সভাপতি মো রবিউল ইসলাম বলেন, ‘দুটি ভাড়া করা রুমে পাঁচ ব্যাচ ক্লাস করছে। একটা ইউআরপির কাছ থেকে অন্যটা পাবলিক এ্যাডের থেকে। অন্যান্য বিভাগের যখন ক্লাস থাকে না তখন ক্লাস করতে হয়। শিক্ষকদের বসার জায়গা নেই, সবাই এক রুমেই বসে’।

বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নওরিন সুলতানা বলেন, ‘সেমিনার লাইব্রেরীতে প্রয়োজনীয় বই থাকলেও কোন লাইব্রেরীয়ান নেই। মাঝে মধ্যে কামরুল ভাই (বিভাগের কেরাণী) বই ইস্যু করেন আর বেশিরভাগ সময় তালা মারা থাকে’। ইতোমধ্যে সেশন জ্যামের শিকার হয়েছে বিভাগের শীক্ষার্থীরা।

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ও শীক্ষার্থীরাও জানালেন অভাব অভিযোগের কথা। চার বছর ধরে স্থায়ী ক্লাসরুম এখনো পাননি তারা। তাদেরকে বাংলা ও ইতিহাস বিভাগের ক্লাসরুম ব্যবহার করতে হচ্ছে। শিক্ষকরাও সবাই মিলে একটি রুমে বসছেন। চারতলায় বরাদ্দকৃত জায়গায় কাজ চলছে কিন্তু বেশকয়েকবার নির্মানকাজের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরেও কাজ শেষ হয়নি। পাঁচটি ব্যাচের জন্য শিক্ষক রয়েছেন মোট চারজন। যেখানে একটি শিক্ষাবর্ষে একজন শিক্ষকের তিনটির বেশি কোর্স পরিচালনা করার কথা না, সেখানে ক্লাসের চাপ সামলাতে একজন শিক্ষক ছয়টি পর্যন্ত কোর্স নিচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ আদনান ফাহাদ জানান, ‘আমাকে এ বছর ছয়টি কোর্স দেয়া হয়েছে। এতগুলি কোর্সের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া, ব্যক্তিগত পড়াশুনা, গবেষণা কোন কিছুই সম্ভব হচ্ছে না। মাঝে মাঝে নিজেকে সোনার ডিম পাড়া হাঁস মনে হয় যার পেটে থেকে একবারেই সব ডিম বের করতে ছুঁরি চালানো হচ্ছে’।

চার বছরে বিভাগে কোন মিডিয়া ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ল্যাব ছাড়াই এ বিষয়ক প্র্যাকটিক্যাল কোর্সগুলি দায়সারাভাবে শেষ করা হচ্ছে । এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানালেন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সৌগত বসু।

ওদিকে, পাবলিক হেলথ এন্ড ইন্ফরমেটিকস বিভাগের পাঁচটি ব্যাচের প্রায় দু’শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র তিনজন। শিক্ষক সংকটের কথা স্বীকার করে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহমান জানান, ‘সার্কুলার দেয়া হয়েছে। নিয়োগের প্রক্রিয়া চলতেছে তবে এটি তরান্বিত করলে ভাল। সিনিয়র শিক্ষক সহ এখন কমপক্ষে ১২ জন শিক্ষক প্রয়োজন। এত অল্প শিক্ষক দিয়ে বিভাগটি পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি আরো জানান, বিভাগে ব্যবহারিকের জন্য কোন ল্যাব নেই। ক্লাসরুম মাত্র তিনটি যা অস্থায়ী।

চারুকলা বিভাগেও রয়েছে শিক্ষক সংকট। চার ব্যাচের জন্য শিক্ষক রয়েছেন চারজন। বিভাগের সভাপতি এম এম ময়েজউদ্দিন বলেন, বিভাগে ক্লাসরুম সমস্যা অত প্রকট নয় তবে ব্যবহারিক ক্লাস করার মত ক্লাসরুম নেই। এছাড়া প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট দরকার যা নেই।

তুলনামুলকভাবে পুরনো একাউন্টিং এন্ড ইফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে বর্তমানে সাতটি ব্যাচে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থী । সাতটি ব্যাচের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমপক্ষে ১৫ জন শিক্ষক প্রয়োজন হলেও মোট নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের সংখ্যা ছয়।এদের মধ্যে একজন শিক্ষাছুটিতে আর একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় চারজন (এর মধ্যে দুজন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত) শিক্ষক দিয়েই চলছে বিভাগটি। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় বিভাগটির জন্য দুজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এই কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে পুরো বিভাগ। ইতোমধ্যেই বিভাগটির বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এক থেকে দেড় বছরের সেজনজটে পড়েছেন। এছাড়া বিভাগে নেই কোন সেমিনার ও লাইব্রেরী। ক্লাসরুম মাত্র দুটি। বিভাগের সভাপতি প্রবাল দত্ত এসব সংকটের সত্যতা স্বীকার করেন ও নিরসনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিভাগগুলোতে দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষক, ক্লাসরুম, ল্যাব এসবের অভাব থাকলেও তা সমাধানের কার্যকরী কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেনা। ফলে সেশন জ্যামের কবলে পড়ছে হাজার হাজার শীক্ষার্থী। এখন পর্যন্ত জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি আর আশ্বাসের বাণীতেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন ভবনের কাজ হচ্ছে, শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আশা করি সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান হবে।’

দ্য রিপোর্ট/এএস/৪ জুন ২০১৪