জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
অবহেলিত ডাইনিং কর্মচারীরা !
আব্দুল্লাহ শুভ, দ্য রিপোর্ট: সরকারী ছুটি নেই। নেই সাপ্তাহিক ছুটি। নিয়মিত আাগুনের কাছাকাছি থাকতে থাকতে তাদের কৃষ্ণকায় শরীরটা কৃষ্ণতর হচ্ছে দিনকে দিন।যতই অসুস্থ থাকুক না কেন অথবা আপনজনের অবস্থা খুবই খারাপ! তাতে কি ! ছুটি মিলবে না ! তারা অবশ্য ছুটি চানও না । কারন তাদের চোখের সামনে সর্বদাই কিছু ক্ষুধার্ত মানুষের মুখ ভেসে ওঠে। আর যাই হোক, তাদের ফেলে এক মুহুর্তও অন্য কোথাও যাওয়ার চিন্তা করতে পারে না তারা। ছুটি নেওয়া তো দুরের কথা। আর প্রাপ্তি? ৩০ দিন শেষে পচিশ শত টাকা ! অবশ্য মনে রাখা ভাল, তাদের স্ত্রী, সন্তান, আত্বীয় স্বজন সবই আছে। তাদেরও খেতে হয়। সন্তানদেরকে পড়াতে ইচ্ছে হয়। সমাজের আট দশটা মানুষের মত তাদেরও একটা দোকানে বসে, একটা পান, একটু চা খাওয়ার ইচ্ছে হতেই পারে। কিন্তু পচিশ শত টাকায় যেখানে তাদের চুলাতেও আগুন পরে না অনেক সময় , সেখানে এগুলো তো সুখ কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়!
বলা হচ্ছিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিং কর্মচারীদের কথা। দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে এভাবেই চলছে তাদের জীবন। যাদের ঘামঝড়ানো পরিশ্রমে দুই বেলা শিক্ষার্থীদের খাবারের চাহিদা মিটানো হচ্ছে তাদের খাবারের চাহিদা মেটাতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বরং ডাইনিংএ কাজ করানোর পাশাপাশি তাদের দিয়ে হলের মালি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ করানো হচ্ছে কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আসনটি কদিন পরপর নতুন উপাচার্যের সংস্পর্শ পেলেও ডাইনিং কর্মচারীদের দিকে তাদের নজর পরে না। উপাচার্যের ছোয়ায় সবার কপাল খোলে, খোলেনা শুধু হল ডাইনিং কর্মচারিদের। কর্মচারীরা চাকরী স্থায়ীকরণের প্রতিবার আন্দোলনে নামে, আন্দোলন হলেই এ অভুক্ত কর্মচারিদের আশ্বাস দেয়া হয় চাকরী স্থায়ীকরণের। পরে প্রশাসন থেকে যোগসাজশ করে নেতৃত্বদানকারীদের চাকরী দিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দেয়া হয়। এটা যেন রুটিন মাফিক কাজ। ত্রিশ বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে ।
নতুন হল নির্মাণ হলেই সেখানে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে স্থায়ীপদে নিয়োগের কথা থাকলেও তাদের ক্ষেত্রে আশ্বাস শুধু আশ্বাসই থেকে যাচ্ছে। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নতুন হলে লাখ টাকা খেয়ে নতুন কর্মচারী নিয়োগ দিলেও টাকার অভাবে তাদের চাকরী স্থায়ী করা হয় না। সম্প্রতি ৪টি নতুন হলের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে শেখ হাসিনা হলের নির্মাণ কাজ শেষ করে কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ কর্মচারীরা চাকরীর আবেদন করলেও ভাইভা বোর্ডে তাদেরকে কৌশলে বাদ দেয়া হয়েছে।
আবারও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ডাইনিং হল কর্মচারি সমিতি তিন দিনের কর্মবিরতী পালন করছে। সোমবার থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের বুধবার শেষ দিন। এর মধ্যে দাবি না মানা হলে তারা আমরন অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের ডাইনিং কর্মচারী ও ডাইনিং কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, প্রশাসন বারবার আশ্বত্ব করলেও আমরা টাকা দিতে পারি না বলে আমাদের চাকুরী স্থায়ী হয় না । ত্রিশ বছর ধরে এভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি । বর্তমান বাজারে পচিশ শত টাকায় কি হয় বলেন?? দ্রæত চাকুরী স্থায়ীকরনের দাবি জানান তিনি। এবার দাবি না মানা হলে আন্দোলন চরম আকার ধারণ করবে বলেও জানান তিনি।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘তাদের এসব অযেীক্তিক দাবি। তাদের এসব আন্দোলন মেনে নেয়া যায় না’।
জাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে।
দ্য রিপোর্ট/এএস/৪মার্চ ২০১৬