দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টিপাতে শরণার্থী শিবিরসহ উখিয়া, টেকনাফ ও মহেশখালীতে পাহাড় ধস, পানিতে ভেসে গিয়ে আর মাটির দেয়াল চাপায় ১৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে টেকনাফে ৬ জন, মহেশখালীতে ২ জন ও রোহিঙ্গা শিবিরে ৬ জন রয়েছে।

এদের মধ্যে ১০ জন শিশু, ২ জন নারী ও ২ জন বৃদ্ধ রয়েছে। বুধবার (২৮ জুলাই) ভোরে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পানখালী ভিলেজার পাড়ায় পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ শিশু নিহত হয়েছে।

নিহতরা হলেন, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী ভিলেজার পাড়া ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৈয়দ আলমের ছেলে আব্দুস শুক্কুর (১৬), মোহাম্মদ জুবায়ের (১২), আব্দুল লতিফ (১০) মেয়ে কহিনুর আক্তার (১৪) ও জয়নাব আক্তার (৮)।

একই সময় মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের রাজুয়ার ঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনায় ঘটনা ঘটেছে। এতে উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের রাজুয়ার ঘোনা এলাকায় নিহত হয়েছে মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে আলী হোসেন (৮০)। এসময় পাহাড় ধসের ঘটনায় অন্তত ১০ থেকে ১২ জন আহত হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে আহতদের নাম পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দুপুরে পাহাড় ধসের ঘটনায় উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ১০ নম্বর ও ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মনিরঘোনা এলাকা এবং মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের উত্তর সিপাহীর পাড়া ও হোয়ানকে পৃথক এ ঘটনা ঘটেছে। এতে উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ৪ শিশুসহ ৬ জন, টেকনাফে একজন বৃদ্ধের এবং মহেশখালীতে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু-দৌজা নয়ন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুরে ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসে বসত ঘরে মাটি চাপায় উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ১০ নম্বর শরণার্থী শিবিরে তিন শিশুসহ ৫ জন এবং ১৮ নম্বর শরণার্থী শিবিরের খালে পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে ১ রোহিঙ্গা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এতে পাহাড় ধসের ঘটনায় ২ জন আহত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, দুপুরে উখিয়ার ১০ নম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ের ঢালের নিচের ২/৩ টি বসতির উপর মাটি ধসে পড়ে। এতে দুইটি পরিবারের ৩ শিশুসহ ৫ জন ঘটনাস্থলে মারা যায় এবং আহত হয় ২ জন। পরে খবর পেয়ে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাটি চাপা অবস্থায় ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করে।

এদিকে টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। লঘুচাপের কারণে সাগরে জোয়ারের পানি ৩ থেকে ৪ সেন্টমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় ১১৭ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।

বুধবার (২৮ জুলাই) ভোর থেকে টানা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সঙ্গে বয়ে যাচ্ছে বাতাস। এর ফলে কক্সবাজার সদরের পিএমখালী, পোকখালী, ভারুয়াখালী, গোমাতলী, ঈদগাঁও, ইসলাম, রামু, পেকুয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, উখিয়ার জালিয়াপাড়া, ইনানী, টেকনাফের সাবরাং, হ্নীলা, হোয়াইক্যং, মহেশখালী, কুতুবদিয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া দপ্তরের সহকারি আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের কারণে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার উপকূলে যে সমস্ত নৌযান চলাচল করে সেসব নৌযানকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদে থেকে মাছ শিকারের কথা বলা হচ্ছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১১৭ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৮জুলাই, ২০২১)