দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আমানতের সর্বনিম্ন সুদহার পরিবর্তনের সুপারিশ নাকচ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বুধবার (১১ আগস্ট) ব্যাংকগুলোর এমডিদের সঙ্গে ব্যাংকার্স সভায় এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনা মহামারির কারণে সাড়ে ছয় মাস পর এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে গত রোববার এ আমানত এর সর্বনিম্ন সুদ হার নির্ধারণ করে একটি সার্কুলার জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) কাছে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সার্কুলার অবিলম্বে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বর্তমান সময়ে দেশের ব্যাংকগুলো গড়ে চার শতাংশের কিছু বেশি হারে সুদ বা মুনাফা দিয়ে থাকে। সুদের হার অতিমাত্রায় কমে গেলে ভবিষ্যতে ব্যাংকে আমানতের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমানতের সুদ বা মুনাফা নির্ধারণে আগের তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতি হারকে বিবেচনায় নিতেও বলা হয়েছে ওই সার্কুলারে।

গত জুলাই মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশে। যা জুন মাসে ছিল ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সেই হিসাবে আমানতের উপর সুদ প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাংশ দিতে হবে।

করোনা মহামারির কারণে সাড়ে ৬ মাস পর ব্যাংকগুলোর এমডিদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এমডিরা এতে যোগ দেন। সভায় ঋণের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়নের অগ্রগতি। মেয়াদি আমানতে মূল্যস্ফীতির কম সুদ না দেওয়ার নির্দেশনা প্রত্যাহার বা পরিমার্জন কিংবা ঋণ ও আমানতে উভয় ক্ষেত্রে সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার দাবিসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হয়।

সভায় অংশ নেয়া একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমানতের সুদ হার কমানোর জন্য কয়েকজন ব্যাংকের এমডির অনুরোধ করলে বৈঠকে সুদহার না কামানোর যুক্তি তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এছাড়া মোবাইল-ল্যাপটপ কেনার জন্য ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়ার বিষয়ে জানতে চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এ খাতটিতে অনুৎপাদনশীল খাত হিসেবে এ যাবত দেখলেও এখন থেকে উৎপাদনশীল খাত হিসেবে দেখতে বলেছেন গভর্নর। এছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ শতভাগ বাস্তবায়ন করায় ১৫ টি ব্যাংকে প্রশংসাপত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকগন আমানতের সুদ কামানোর জন্য অনুরোধ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক আমনতের সুদ বহাল রাখতে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করেনে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি দেয়া নির্দেশনাই বহাল রাখেন।

সভায় করোনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোর বিশেষ সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) নিয়ে আলোচনা রয়েছে। এছাড়া প্রণোদনার আওতায় দ্বিতীয় বছরে বড় শিল্পে ৩৩ হাজার কোটি টাকা এবং সিএমএসএমই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।

একইসঙ্গে সিএমএসএমই খাতে প্রথম বছর ১৫ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী ১৬টি ব্যাংক ও ৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রশংসাপত্র দেওয়া হবে। আর ৪০ শতাংশের কম বিতরণ করা ব্যাংকগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে।

সভায় নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং স্ব-কর্মসংস্থান উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দুটি স্টার্ট-আপ তহবিল গঠন নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মাত্র ৪ শতাংশ সুদমুনাফায় জামানতবিহীন 'স্টার্ট আপ' অর্থায়নের উদ্দেশ্যে দুটি ‘ স্টার্ট - আপ ফান্ড গঠন করবে। একটি ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড' নামে পাঁচশত কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল এবং তফসিলি ব্যাংকসমূহ কর্তৃক তাদের বাৎসরিক নীট মুনাফা হতে ১ শতাংশ অর্থ স্থানান্তরপূর্বক নিজস্ব স্টার্ট-আপ ফান্ড।

মামলা না থাকা স্বীকৃত বিল যথাসময়ে পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলোকে বেশ আগ থেকে নির্দেশনা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অধিকাংশ ব্যাংকের অপরিশোধিত স্বীকৃত বিল কমলেও ২৮টি ব্যাংকের এখনও বকেয়া রয়েছে। এ নিয়েও সভায় আলোচনা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১২আগস্ট, ২০২১)