ঠান্ডা মাথায় চাঁদাবাজি করতেন হেলেনা জাহাঙ্গীর
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বেতন না দিয়ে উল্টো প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে সারা দেশে চাঁদাবাজি করতেন অনুমোদনহীন আইপি টিভি জয়যাত্রার মালিক হেলেনা জাহাঙ্গীর। জয়যাত্রা টেলিভিশনের প্রতিনিধিরা জানান, নানাভাবে তাদের থেকে টাকা আদায় করতেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার। শুধু জয়যাত্রা নয় এ রকম অনেক প্রতিষ্ঠান আছে জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।
ব্ল্যাকমেল, চাঁদাবাজি অবৈধভাবে আইপি টিভি চালানো এবং প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন আলোচিত-সমালোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীর।
মিরপুরে তার আইপি টিভির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, জয়যাত্রা টিভির নামে স্টিকার লাগানো একটি মাইক্রোবাস। অফিসের প্রথম এবং তৃতীয় তলা বন্ধ রাখা হয়েছে। দরজার কাছে সাঁটানো বোর্ডে লেখা বিভিন্ন সংগঠনের নাম। কিন্তু সেখানে এখন কেউ নেই।
জয়যাত্রায় কাজ করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার আশুলিয়ার একজন জানান, নিয়োগের কথা বলে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার। একজনের থেকে টাকা নেয়া হলেও একই এলাকায় প্রতিনিধি হিসেবে অন্যদের নিয়োগ দেয়া হত।
প্রতারণার শিকার সিফাত মাহমুদ ফাহিম বলেন, ঠান্ডা মাথায় চাঁদাবাজির তাদের একটা কৌশল। বেতন দেয়া তো দূরের কথা, উল্টো ওনাদের প্রতি মাসে টাকা দেয়া লাগতো আমাদের। প্রতি মাসে আমাদের চাপ সৃষ্টি করতো যে, আমাদের কমার্শিয়াল দেন। যদি কখনো লাইভে দাঁড়াতাম, তাহলে বলতো যে ফাহিম আপনি লাইভ করেছেন। লাইভের টাকা পাঠান।
তিনি আরও বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীর ম্যাডাম আমাকে দুদিন ফোন করেছিলেন। বলেন, ফাহিম তুমি কাজ করো। আমি বললাম, না ম্যাডাম। আমি আপনার প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দিয়ে কাজ করতে পারব না। তাদের কথা, টাকা না দিলে তোমাকে রাখব না।
প্রতারণার শিকার কুমিল্লার প্রতিনিধিদের একজন জানান, নিয়োগের বিনিময়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল তার কাছ থেকে এবং রিসিটের মাধ্যমে ধাপে ধাপে সেই টাকা আদায় করেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। পরে আরও কয়েকজনকেও একইভাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
প্রতারণার শিকার এইচ এম মহিউদ্দিন বলেন, ২০১৯ সালের শেষ দিকে আমাকে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা চায়। তাদের এ টাকা দিতে আমি অপারগতা প্রকাশ করেছি। এ টাকা নেয়ার কারণ হচ্ছে আমি যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাই তাহলে এই টাকা দিয়ে তারা দায়ভার বহন করবে- আমাকে এমনটাই তারা বলেছিলেন। কিন্তু আমি বলছি এ টাকা আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব না। পরে ধাপে ধাপে দিতে পারব। এ প্রতিশ্রুতিতে আমাকে তারা প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়। তাদের ধাপে ধাপে পঞ্চাশ হাজার টাকা আমি দিয়েছি। আমার কাছে মানি রিসিট রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জয়যাত্রায় কাজ করতে গিয়ে দেখি তারা আরও ২৫-৩০ জনকে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন। কেউ অফিস থেকে নিয়োগ পেয়েছেন আবার কেউ হেলেনা জাহাঙ্গীর ম্যাডামের কাছ থেকে নিয়োগ পেয়েছেন। পরে আমি তাদের বলি যে, আমি আর কাজ করব না। আপনারা আমার কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছেন তা দিয়ে দেন। এ টাকা আমাকে দেবে দেবে বলে প্রায় দু’বছর। অথচ আমাকে টাকা দেয়নি।
শুধু হেলেনা জাহাঙ্গীর নয়, এ রকম সাংবাদিক নিয়োগের মাধ্যমে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এবং অপরাধী তৈরি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর দাবিও জানান ভুক্তভোগীরা।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৩আগস্ট, ২০২১)