দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে বাংলাদেশের শেয়ার বাজার। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এই সেক্টরের দুর্নাম দূর করতে অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছে। সপ্তাহে একদিন বা দু’দিন পতন হলেও বাকি দিনগুলোতে উত্থান হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রায় সময়ই এই বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত থাকছে। বিএসইসির কর্মকর্তারা সেকথা বেশ জোরেশোরেই বলছেন।
গতসপ্তাহের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়েছে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট)। প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচক বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার ক্রমান্বয়ে আরও উন্নততর হবে বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক শামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দেশের পুঁজিবাজারের যে উন্নয়ন হয়েছে তা প্রাথমিক। এই পুঁজিবাজার ক্রমান্বয়ে আরও উন্নততর হবে। এখনও বাজার মূলধন মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২০ শতাংশের সমান হয়নি।’
শুক্রবার(১৩ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিন এসব কথা বলেন।
শেয়ার বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দিকে ইঙ্গিত করেই বিএসইসির কমিশনার আরও বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে যদি কাজ করতে পারি, আমরা আরও অনেক ওপরে উঠতে পারবো।’
এদিকে গত সপ্তাহের বাজার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একদিন সূচক পতন আর তিন দিন উত্থানের মধ্য দিয়ে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার। আলোচিত সপ্তাহে (৯-১২ আগস্ট) সূচক, লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর তাতে নতুন করে বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন অর্থাৎ পুঁজি বেড়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ রোধে বিধিনিষেধের মধ্যে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার (৮ আগস্ট) পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ ছিল। যে কারণে সোম, মঙ্গল বুধ ও বৃহস্পতিবার মোট চার দিন লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র বুধবার পুঁজিবাজারে সূচক কমেছে, আর বাকি তিনদিন সূচক বেড়েছে। এর আগের সপ্তাহে তিন কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল।
আলোচিত সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) আগের সপ্তাহের চেয়ে ১০৩ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৬৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা সূচকটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। এই সূচকের পাশাপাশি ডিএসইর অপর দুই সূচক ডিএসইএস সূচক ১৯ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৫৯ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৪২৭ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। এই দুটি সূচকও ইতিহাসের সেরা স্থানে অবস্থান করছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেশির ভাগ শেয়ার ও সূচক বাড়ায় নতুন করে গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ফিরেছে ৩ হাজার ৫৪২ কোটি ৫৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫৯৬ টাকা। শুধু তাই নয়, বাজার মূলধনের অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এখন ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৮ কোটি ৬৬ লাখ ৯১ হাজার ৫৬৮ টাকায় অবস্থান করছে। এর আগের সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ফিরেছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে চার দিনে মোট ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি ১৭ লাখ ৬৭ হাজার ৯০৭ টাকা লেনদেন হয়েছে। এর আগের সপ্তাহের মোট তিন কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল সাত হাজার ১৩কোটি ৯৯ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা। অর্থাৎ, আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন ৫১ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে একদিনে ২৯শ’ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন।
বিদায়ী সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। তার আগের সপ্তাহের গড় লেনদেন ছিল ২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা।
এই সময়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৮৮টির, কমেছে ১৭৮টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) চার কার্যদিবসে মোট ৪০৮ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৬২৫ টাকা লেনদেন হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২৪৩ কোটি ৩০ লাখ ৫২ হাজার ৪৭৫ টাকা।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৭২টির, কমেছে ১৫৮টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
(দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/১৩-০৮-২১/শুক্রবার )