দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: টানটান উত্তেজনায় কেটেছে রাত। সকাল হতেই বিনাযুদ্ধে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়ে গেল আফগানিস্তানে। তালিবান নেতাদের সঙ্গে মাত্র ৪৫ মিনিট বৈঠকের পরেই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিলেন আশরাফ গনি।

তার জায়গায় এ বার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন আর এক গনি, মোল্লা আবদুল গনি বরাদর। বর্তমানে আফগানিস্তানে তালিবানের প্রধান তিনি। রবিবার সকালে আশরাফ এবং আমেরিকার কূটনীতিবিদদের সঙ্গে সমঝোতা করতে তিনিও প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হাজির ছিলেন।

শনিবার রাতে উত্তরের মাজার-ই-শরিফ দখলের পর থেকেই কাবুলের পতনের ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছিল। রবিবার সকালে জালালাবাদ দখল করে তাতে সিলমোহর দেন তালিবান যোদ্ধারা। তার পর রাজধানী কাবুলেও দলে দলে প্রবেশ করতে শুরু করে তারা। যদিও দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশে কাবুলে ঢোকার মুখেই থমকে যেতে হয় তাঁদের। এর পর সরাসরি আশরাফ এবং আমেরিকার কূটনীতিবিদদের সঙ্গে সমঝোতা চান বলে দাবি করেন তালিবান নেতৃত্ব। জানিয়ে দেন, গায়ের জোরে কাবুল দখল করতে চান না তাঁরা। শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর চান।

এর পরেই মার্কিন কূটনীতিবিদ এবং ন্যাটো প্রতিনিধিদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন আশরাফ। তারপর বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় তালিবান নেতৃত্বকে। সেই মতো মোল্লা আবদুল গনি বরাদরের নেতৃত্বে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের উদ্দেশে রওনা দেয় তালিবানের একটি প্রতিনিধি দল।

১৯৯৪ সালে তালিবান আন্দোলনের হোতাদের মধ্যে অন্যতম এই মোল্লা আবদুল গনি বরাদর। ২০০১ সালে আমেরিকা আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর, আমেরিকা বিরোধী যে জেহাদ শুরু হয়, তার চালকের আসনে ছিলেন গনি। ২০১০ সালে আমেরিকা এবং পাকিস্তানের যৌথ অভিযানে করাচিতে ধরাও পড়েন তিনি। তার পর থেকে সে ভাবে জনসমক্ষে দেখা যায়নি তাঁকে। কিন্তু ২০১২ সালে আফগান সরকার যে সমস্ত তালিবান বন্দিদের মুক্তি নিয়ে উদ্যোগী হয়, তাতে গনির নাম একেবারে উপরের দিকে উঠে আসে। সে বছর ২১ সেপ্টেম্বর গনিকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান, যদিও তালিবান তা স্বীকার করে ২০১৮ সালে। তার পর থেকেই তার সঙ্গে শান্তিস্থাপন নিয়ে আলোচনা শুরু করতে উদ্যোগী হয় তৎকালীন আফগান সরকার। আমেরিকা দাবি করে, তাদের অনুরোধেই গনিকে ছেড়েছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানে গ্রেফতার হওয়ার সময় তালিবানের ধর্মীয় বিভাগের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ছিলেন গনি। প্রাক্তন তালিবান প্রধান মোল্লা মহম্মদ ওমরের ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত লোক বলে পরিচিত ছিলেন। এমনকি মোল্লা ওমরের বোনকে বিয়েও করেন গনি। তাই তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করা গেলে আমেরিকা এবং ন্যাটোবাহিনী সরে গেলে, দেশে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে বলে আশাবাদী ছিল আফগান সরকার। কারণ গনি নিজেও একাধিক বার আমেরিকা এবং আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।

কিন্তু জাতিসংঘের নিষিদ্ধ জঙ্গিদের তালিকায় নাম ওঠার পর থেকেই আমেরিকাকে দেশ থেকে তাড়ানোই লক্ষ্য হয়ে ওঠে গনির। সেই সময় বিবৃতি জারি করে গনি জানিয়েছিলেন যে, আফগানিস্তানে আমেরিকার প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হবে। আর তা যাতে হয়, তালিবান তা নিশ্চিত করেই ছাড়বে। আফগানিস্তানের মাটি থেকে আমেরিকাকে উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত জেহাদ চলবে বলেও জানিয়ে দেন গনি।

আফগানিস্তান নিয়ে ভারত যখন খানিকটা কোণঠাসা, ঘটনাচক্রে সেইসময়ই, গত জুলাই মাসে চিনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তালিবান প্রধান গনি। সেই সময় ওয়াং বলেন, ‘‘প্রতিবেশি হিসেবে আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে চীন। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কারও হস্তক্ষেপ একেবারেই কাম্য নয়। আফগানবাসীদের চীন বন্ধু ভাবে।

‘আফগানিস্তানের উপর একমাত্র অধিকার সে দেশের মানুষের। তাই আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎও তারাই ঠিক করবেন। আমেরিকা এবং ন্যাটো যে ভাবে তাড়াহুড়ো করে সেনা তুলে নিল, এতে তাদের ব্যর্থতাই প্রমাণিত হচ্ছে। তাদের চলে যাওয়াতেই স্থিতিশীলতা এবং শান্তি ফিরিয়ে আনার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে।’’

তাই আটঘাট বেঁধেই তালিবান প্রধান আফগানিস্তানের দখল নিতে নেমেছিলেন বলে মনে করছেন কূটনীতিবিদরা। সূত্র: আনন্দবাজার

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৫আগস্ট, ২০২১)