দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশে হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও। গত জুলাইয়ের চেয়ে দ্বিগুণ মৃত্যু হয়েছে আগস্টের গত ২২ দিনেই। এ বছর দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৩৬ জন। এর মধ্যে গত মাসে মারা গেছে ১২ জন। আর এই মাসের গত ২২ দিনে মারা গেছে ২৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি মৌসুম এডিস সার্ভে ২০২১-এর অবহিতকরণ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রাজধানী ঢাকার দুই এলাকায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা সবচেয়ে বেশি। সেখানে মশার ঘনত্ব ৭৩.৩ শতাংশ। এই দুই এলাকা হলো- বাসাবো ও গোড়ান। অন্যদিকে এডিসের উৎস একেবারেই পাওয়া যায়নি আফতাবনগর, মেরুল বাড্ডা ও বংশালে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ লার্ভা ও পিউপা মিলেছে বিভিন্নভাবে জমে থাকা বহুতল ভবনের পানিতে, যা ৪৪.২ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত ২৯ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১০ দিন এই সার্ভে চালানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ২০টি দলের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানে এই কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রতিদিন সার্ভে শেষে পজিটিভ বাড়িগুলোর ঠিকানাসহ দৈনিক তথ্য সম্পর্কে সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়।

উপস্থাপিত তথ্যে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় সবচেয়ে বেশি ঘনত্ব সূচক (ব্রুট ইনডেক্স) পাওয়া গেছে মগবাজার-নিউ ইস্কাটনে ৫৬.৭, নিকুঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় ৪৮.৪, কল্যাণপুর-দারুসসালামে ৪৬.৭, মিরপুর-১০-কাজীপাড়ায় ৪৩.৩ এবং মহাখালী-নিকেতনে ৪০ শতাংশ। দক্ষিণ সিটির বাসাবো-গোড়ানে ৭৩.৩, এলিফ্যান্ট রোড-সায়েন্স ল্যাবে ৬৬.৭, আর কে মিশন রোড-টিকাটুলীতে ৫০ এবং বনশ্রী-মিন্টো রোড-বেইলি রোডে ৪০ শতাংশ।

এই জরিপে সর্বাধিক পজিটিভ কনটেইনারগুলোর মধ্যে মেঝেতে জমানো পানিতে সর্বোচ্চ ১৮.৫, প্লাস্টিক ড্রামে ১২.১, প্লাস্টিক বালতিতে ৯.৪, ফুলের টব ও ট্রেতে ৭.৫, পরিত্যক্ত গড়ির টায়ারে ৬.৯, অন্যান্য ৬.৬ এবং রঙের কৌটায় ৩.২ শতাংশ লার্ভা ও পিউপা মিলেছে। এর মধ্যে আবাসিক এলাকার বহুতল ভবনে ৪৪.২, একক ভবনগুলোয় ২৪.৫, নির্মাণাধীন ভবনে ১৯.১, বস্তি এলাকায় ৯.৭ এবং পরিত্যক্ত জমিতে ২.৬ শতাংশ লার্ভা দেখা যায়।

আরও পড়ুন... মশার কামড়ে ৩৫ জনের মৃত্যু

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, কোনো এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব পরিমাপের একক ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি হলেই তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা যায়। এসব এলাকায় চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এ ঘনত্ব যত বাড়বে ওই এলাকার ঝুঁকিও বাড়বে। ব্রুটো ইনডেক্স ৫০-এর বেশি যেসব এলাকায় পাওয়া গেছে সেসব এলাকা অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলা যেতে পারে। যেহেতু ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের চারটি ওয়ার্ডের আটটি এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ৫০-এর বেশি পাওয়া গেছে। সেহেতু এই আটটি এলাকাকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলা যেতে পারে। তাদের মতে, বাসাবো, গোড়ান, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাব, মগবাজার, নিউ ইস্কাটন, আর কে মিশন রোড়, টিকাটুলী এই আটটি এলাকাকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে ছোটদের চেয়ে বড়রা বেশি আক্রান্ত হলেও ছোটদের ঝুঁকি তুলনামূলক কিছুটা বেশি। কারণ একেবারে ছোট শিশুরা তাদের উপসর্গ বলতে বা বোঝাতে পারে না। ফলে অভিভাবকদেরও বুঝতে বুঝতে দেরি হয়ে যায়। ততক্ষণে হয়তো শিশুটি বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যায়।

.(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৩আগস্ট, ২০২১)