কাশ্মীর পরবর্তী লক্ষ্য: আল-কায়েদা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: মুসলিমদের ‘স্বাধীন করতে’ আল-কায়েদার পরবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রের তালিকায় কাশ্মীরের সঙ্গে আছে পশ্চিম এশিয়ার লেভান্ত বা পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় দেশ ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান ও লেবাননের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এ ছাড়া রয়েছে ইসলামিক মাগরিব বা আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ লিবিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়া, তিউনিসিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘দখলদারিত্ব’ থেকে আফগানিস্তান ‘স্বাধীন হয়েছে’ বলে উচ্ছ্বসিত নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদা। অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিমদেরও ‘মুক্তির স্বাদ’ দিতে মুসলিম বিশ্বের প্রতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক জিহাদ গড়ে তোলার তালিকায় আল-কায়েদার পরবর্তী লক্ষ্য ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর।
পাকিস্তানে আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রচারমাধ্যম আস-সাহাবে বলা হয়, ‘মুসলিম বিশ্বের ওপর স্বৈরাচারী শাসন আর নিপীড়ন চাপিয়ে দিয়েছে পশ্চিমারা। আল্লাহর ইচ্ছায় আফগানিস্তানে বিজয়ের মধ্য দিয়ে অন্যান্য অঞ্চলে নিপীড়িত মুসলিমদের সামনেও স্বাধীনতা অর্জনের পথ উন্মুক্ত হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের ধর্মভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবানের জয়ে উল্লসিত আল-কায়েদা নেতারা। ‘সাহসী আফগানরা নিজেদের জয় নিশ্চিতের মাধ্যমে মুসলিমদের সংগ্রামকে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে’ বলেও উল্লেখ করা হয় আস-সাহাবে।
মুসলিমদের ‘স্বাধীন করতে’ পরবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকাও প্রকাশ করেছে আল-কায়েদা। এতে কাশ্মীরের পাশাপাশি পশ্চিম এশিয়ার লেভান্ত বা পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় দেশ ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান ও লেবাননের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে রাখা হয়েছে। এর বাইরে আছে ইসলামিক মাগরিব বা আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ লিবিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়া, তিউনিসিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেন।
তবে বিশেষ প্রাধান্য দেয়া হয়েছে কাশ্মীরকে। আল-কায়েদা শেষবার ভারতের একমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলটির নাম নিয়েছিল সংগঠনটির জম্মু-কাশ্মীর শাখা চালুর ঘোষণার সময়।
ভারতে ইসলাম ধর্ম পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সে সময় জম্মু-কাশ্মীরে শাখা হিসেবে আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ প্রতিষ্ঠা করে আল-কায়েদা।
চীনের শিনজিয়াং আর রাশিয়ার চেচনিয়ায় মুসলিম নিপীড়নের জোরালো অভিযোগ থাকলেও আল-কায়েদার তালিকায় নেই ওই অঞ্চল দুটি। এটি আল-কায়েদার রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের চক্ষুশূল হলেও আফগানিস্তানের নতুন শাসক গোষ্ঠী তালেবান সম্প্রতি চীন ও রাশিয়ার পরোক্ষ সমর্থন অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
আল-কায়েদা প্রধান আইমান আল-জাওয়াহিরিসহ সংগঠনটির প্রধান নেতারা বর্তমানে পাকিস্তানে আছেন বলে মনে করা হয়।
বিবৃতিতে ‘পৃষ্ঠপোষক’ পাকিস্তান সরকারের প্রতি রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শনে আল-কায়েদার ওপর চাপের বিষয়টি স্পষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে।
রাশিয়ার কঠিন শাসন এড়িয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএসে) যোগ দিয়েছিল বিপুলসংখ্যক চেচেন। অন্যদিকে শিনজিয়াংয়ে উইঘুর আদিবাসীসহ বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম নির্যাতন ও জাতিগত নিধন প্রচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে।
তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর আফগানিস্তান থেকে নাগরিকদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর নজিরবিহীন উদ্ধার অভিযানের সাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় এ উদ্ধার অভিযানে চরম বিশৃঙ্খলার জন্য দেশগুলোর সমালোচনা করেই ক্ষান্ত হয়নি চীন-রাশিয়া; নীরব সমর্থনও দিয়েছে তালেবানকে।
আর সম্প্রতি অনানুষ্ঠানিকভাবে হলেও চীন-রাশিয়া, এমনকি তুরস্কের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদারে তৎপর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সুফলভোগী পাকিস্তান।
এ ছাড়া সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসকে নির্মূল প্রচেষ্টায় তালেবান সহযোগিতা করবে বলেও আশাবাদী মস্কো।
তালেবান ও আইএস কট্টরপন্থি ও উগ্রবাদী। তবে আইএসের দৃষ্টিকোণ থেকে শরিয়াহ আইন তালেবানের সংস্করণের চেয়েও অনেক বেশি কট্টর।
আফগানিস্তানে লড়াই অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে আইএস। নিজেদের বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি তালেবানকে আখ্যা দিয়েছে ‘ধর্মত্যাগী’ বলে।
.(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০২ সেপ্টেম্বর, ২০২১)