চীনের টাকায় চলবে তালেবান: মুখপাত্র
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: আফগানিস্তানে নতুন সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর প্রাথমিকভাবে চীনের দেয়া অর্থ সহায়তার ওপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছে তালেবান।
ইতালির একটি সংবাদপত্রকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতালির লা রিপাবলিকা পত্রিকায় বৃহস্পতিবার প্রথম প্রকাশ হয় সাক্ষাৎকারটি। সেখানে মুজাহিদ বলেন, চীনের সহযোগিতা নিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে লড়বে তালেবান।
পূর্ণাঙ্গ বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের সুযোগে গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় কট্টরপন্থি তালেবান। আফগানিস্তানের পশ্চিমা সমর্থিত বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করায় বিশ্বসম্প্রদায়ের বিপুল পরিমাণ অর্থসাহায্য হারিয়েছে নতুন শাসকদল।
সব মিলিয়ে ২০ বছরের যুদ্ধে সমাপ্তি ঘটলেও অর্থনৈতিক ধস ও তীব্র খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে রয়েছে আফগানিস্তান।
এমন পরিস্থিতিতে তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘চীন আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। আমাদের জন্য মৌলিক ও অনন্য সাধারণ সব সুযোগ-সুবিধা উন্মুক্ত করেছে দেশটি। তারা আমাদের দেশে বিনিয়োগ ও আমাদের দেশকে পুনর্গঠনে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
উচ্চাভিলাষী নিউ সিল্ক রোড প্রকল্পে তালেবান সরকারকে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন মুজাহিদ। এশিয়া ও ইউরোপকে সড়ক, রেল ও নৌপথে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ এ নিউ সিল্ক রোড। এতে বাণিজ্যের নতুন পথ উন্মুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বিশ্ব নেতৃত্বে প্রভাব জোরদার করতে চায় বেইজিং।
মুজাহিদ বলেন, ‘আফগানিস্তান তামাসহ বিভিন্ন ধরনের খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। চীনের সহযোগিতায় এসব সম্পদ উত্তোলন ও দেশের উন্নয়ন করতে পারব আমরা। একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে আফগানিস্তানের জন্য প্রবেশপথও খুলে দেবে চীন।’
ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বাইরে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার গচ্ছিত রেখেছিল। তাতেও এ মুহূর্তে প্রবেশাধিকার নেই তালেবানের। অথচ সরকারি সেবা চালু রাখতে এবং সরকারের কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ দরকার তালেবানের।
দীর্ঘ সংঘাতের পর হঠাৎ রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, বিশ্ব রাজনীতিতে কোণঠাসা অবস্থান, অর্থনৈতিক অচলাবস্থা ও বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তীব্র খরায় তীব্র খাদ্য সংকট ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে আফগানিস্তান। জাতিসংঘ জানিয়েছে, দেশটির প্রতি তিনজনে একজন হয়তো অভুক্ত থাকবে সামনের দিনগুলোতে।
গত কয়েক দিনে আফগানিস্তানে খাদ্যপণ্যের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। ভেঙে পড়েছে মৌলিক সেবা খাতগুলো।
চলতি সপ্তাহে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আফগান শিশু, নারী, পুরুষ প্রত্যেকের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সহানুভূতি দরকার সবচেয়ে বেশি।
‘জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আমার অনুরোধ, আফগানিস্তানের মানুষকে তাদের সবচেয়ে কঠিন সময়ে সাহায্য করুন।’
আফগানিস্তানে মানবিক সহযোগিতা নিশ্চিতে বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে ১৩০ কোটি ডলারের তহবিল চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্তেফানে দুজাররিচ। এর মধ্যে তহবিল সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৯ শতাংশ।
ভবিষ্যতে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার অনুমতি দেয়া হবে বলেও সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করে চীন। সরকারে নারীদের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ, হাসপাতালে নার্স বা মন্ত্রণালয়ে সহযোগী হিসেবে কাজের সুযোগ পাবেন নারীরা।
.(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১)