দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সোহরাব হোসেন খন্দকার রঞ্জু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও গ্রহণ করেননি মুক্তিযোদ্ধার সনদ। তালিকাতেও নেই তার নাম। তবে স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া সহযোদ্ধাসহ অনেকেই দাবি করছেন সোহরাব হোসেন খন্দকার রঞ্জু একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তবে যখন বুঝলেন মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ ব্যতিত তার অর্জন মূল্যহীন তখন আবেদন করলেও তালিকাতে ওঠেনি তার নাম। অবশেষে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ছাড়াই গত ২৪ আগস্ট-২০২১ মৃত্যুবরণ করেন সোহরাব হোসেন খন্দকার রঞ্জু।

তার জানাজায় অংশগ্রহণ করেন তার অনেক সহযোদ্ধা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার সেক্টর কমান্ডার শহীদুল্লাহ প্রধান। তিনি বলেন, সোহরাব হোসেন একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা।

তার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট না পাওয়া ও সরকারি সম্মাননা না পাওয়া খুবই দুঃখজনক। তিনি আমার অধীনেই যুদ্ধ করেছেন সে একজন দক্ষ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এছাড়াও তার দুই চাচাতো ভাইকে তিনি তার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ করতে নিয়ে যান তারাও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছে। তার ক্যাম্পের (মুজিব বাহিনী) সকল সহযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছে।


প্রত্যায়ন পত্র আমাদের হাতে এসেছে। এছাড়াও তাহার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট না পাওয়ায় তাঁর সহযোদ্ধারা দুঃখ প্রকাশ করেন। তাঁর সহযোদ্ধা ও চাচাতো ভাই খয়বর হোসেন খন্দকার বলেন, তিনি একজন গর্বিত মুজিব বাহিনীর সদস্য ছিলেন ১৯৭১ সালে ভারতের ‘দেরাদুন’ ক্যাম্পে ৫৬ দিনের প্রশিক্ষণ নেন। তারপরে ২৬ আগস্ট ১৯৭১ তিনি মুজিব বাহিনীর কমান্ডার অধ্যক্ষ শহীদুল্লাহ্ প্রধানের অধীনে দই খাওয়া অস্থায়ী ক্যাম্পে যোগ দেন। যুদ্ধের শেষদিন পর্যন্ত তিনি ৬ নং সেক্টরে মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে যুদ্ধ করেছিলেন। সে সময় তিনি বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং এ থার্ড ইয়ারে পড়তেন। যেহেতু তিনি বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন তাই তাকে মুক্তিযুদ্ধে রেডিও সিগন্যাল এবং এক্সপ্লোসিভের ওপর বিশেষভাবে ট্রেনিং দেয়া হয়।

যুদ্ধের পরে তিনি পুনরায় পড়াশোনায় ফিরে যান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০০ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সময়ের আগেই অবসর গ্রহণ করেন। যে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ প্রদান ও যাচাই- বাচাই করা হয় সে সময় সোহরাব হোসেন খন্দকার রঞ্জু বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারহিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেশ-বিদেশে তার ডিউটি থাকার কারণে তালিকা করার সময় উপস্থিত থাকতে পারেননি তিনি। তাই ওই সময় তিনি বাদ পড়েন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে। পরবর্তীতে আবার তিনি আবেদন করেন, এতে বিভাগীয় জেলা কমিটি যাচাই-বাচাই করে সত্যতা পাওয়ায় তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ প্রদান করার অনরোধ করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে তার নাম আর এখন পযর্ন্ত ওঠেনি। এদিকে সহযোদ্ধাদেরই দাবি সোহরাব হোসেন খন্দকার রঞ্জু দেশের একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তাই সে যেন তার প্রাপ্য সম্মাননা ও স্বীকৃতি পায় এটাই আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রত্যাশা করছি। সেই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী মহোদয় এর একান্ত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।


প্রয়োজনে
১. সেক্টর কমান্ডার শহীদুল্লাহ প্রধান
মোবাইল- ০১৭১৬১৩৬২৩৭
২. মুক্তিযোদ্ধা খয়বার খন্দকার (সহযোদ্ধা)
মোবাইল- ০১৭২৪১৩৭৮৬০

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১)