“এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার” জন্মদিনে দেদীপ্যমান
মহিউদ্দীন মোহাম্মদ
ভীষণ একা বিনয় মজুমদার।
… … … …
“স্মৃতির মতো রহস্যময় তিনি,
বীজের মত ব্যাকুল দুটি চোখ
মেলে আছেন, সামনে পড়ে আছে
কান্না, ধুলো, আকাশ:বিশ্বলোক”
[বিনয় মজুমদার: তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়]
বিনয় আমার ঘরে দেদীপ্যমান। তবু তাঁকে এত কাছ থেকে আনত আলোয় দেখা হয় নি তো। ‘ এক আশ্চর্য ফুল’ আমাদের চেতনাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। সাধারণ পাঠকের চেয়ে বিনয় পঠিত কবিদের মধ্যে বেশি। কিন্তু একটি দ্যুতিময় সৃজনশীল কর্ম জানান দিয়ে গেল, বিনয় মজুমদারকে খুব করে পড়া দরকার। তিনি বাংলা সাহিত্যের সেই কবি, যাকে না পড়লে আমাদের সাহিত্য পাঠ অপূর্ণ থেকে যাবে।
এ কথা যে অত্যুক্তি নয় পাঠক, “এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার” পড়লেই বুঝতে পারবেন সেটা। এ পার, ওপার দু বাংলা মিলে এমন একটি সংকলন সম্পন্ন হয়নি বলে আমাদের বিশ্বাস।
বইয়ের দাম ১৪৫০ টাকা। কাজ হিসেবে এ মূল্য নগণ্য। কারণ যাদের লেখা সূচিবদ্ধ করা হয়েছে তাঁরা প্রত্যেকে আলোচ্য কবিকে ভিন্ন ভিন্নভাবে, নতুন মাত্রায় হাজির করেছেন। এ স্বার্থকতার দায় দুজনের। একজন এ পার বাংলার কবি ও গবেষক এহসান হায়দার। অন্যজন ওপার বাংলার কবি ও গবেষক স্নিগ্ধদীপ চক্রবর্তী। যতটুকু জানাগেছে, এই কাজটি করতে তাঁরা দীর্ঘসময় নিয়েছেন। দুপারে খুঁজেছেন সখাজনদের।
বইয়ের শুরুতে প্রথম সম্পাদক এহসান হায়দার লিখেছেন, “কবিতায় অদৃশ্য কোনো নিয়ম মেনেই বোধকরি-গল্পেরা পাখির মতো ঘোরাঘুরি করে আমাদের ভিড়ে-নির্জনে। এই মহাজাগতিক সত্যিটা উপলব্ধি বা উপভোগ করতে গেলে আর্কিমিডিস, পিথাগোরাস হতে হবে তা নয় যেন, কিছুটা সময়ের জন্য যন্ত্রপনা ছেড়ে আদ্যোপান্ত একটু মানুষ হলে চলে। বিনয় সে মনুষ্যপনার দিকেই যাত্রা করেছেন ধীরে ধীরে বেদনার জ্যামিতিক উপায়ে। উপশমের ভেতর সতত তিনি আলোর গতির পথে হেঁটে হেঁটে গিয়েছেন শূন্যে।”
আজ বিনয়ের জন্মদিন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলা ১৩৪১ সনের ৩১শে ভাদ্র বাবা বিপিনবিহারী মজুমদার ও মা বিনোদিনী দেবীর ঘর আলো করে এসেছিলেন তিনি।
বর্তমান বইয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের একটা নাতিদীর্ঘ লেখা আছে। সেখানে তিনি বলছেন, “ জীবনানন্দ দাশ বলতেন-‘উপমাই কবিত্ব’, রবীন্দ্রনাথ বলতেন, ‘স্বপ্নই কবিতা’। স্বপ্ন, উপমা, অনুভূতি, চিত্রফলন এসব কবিতারই যা সৎ, বিশুদ্ধ কবিতায় থাকে। আমি সাম্প্রতিক কালের এক কবির সম্পর্কে আশা রাখি, যিনি কবিতার জন্য যথার্থ জন্মেছেন। আমার মনে হয় একালে বাংলাদেশে এত বড় শক্তিশালী শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কবি আর জন্মাননি। তিনি হলেন বিনয় মজুমদার। যাঁকে অনেকে পঞ্চাশ দশকের কবি বলেন। কিন্তু আমি নিজে দশক বিভাগে বিশ্বাসী নই, তাই আমার আলোচিত এই কবি কোনো দশকের নন।…ঋত্বিক ঘটক সমালোচনায় বন্ধুকৃত্য করে না। নিজে যা ভালো বোঝে তাই লেখে। আমার জ্ঞান ও বিশ্বাসমতে অনেক কবিতার মেলায় এই কবিকে সহজেই চেনা যাবে।” ঋত্বিক ও বিনয় দুজনই খ্যাপাটে মানুষ। ঋত্বিক চলচ্চিত্রকে একটা নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছেন, বিনয় কবিতাকে নিয়ে গেছেন অনেকদূর নতুন আলোয়। দুজনই আমাদের আকাশের উজ্জ্বল তারা।
“ এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার” আকরগ্রন্থ করতে গিয়ে সম্পাদক দুজন নিরালস পরিশ্রম করেছেন। মলাটবদ্ধ করেছেন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ লেখা। যার কারণে সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে গবেষক ও লিখিয়ের প্রভুত কাজে বইটিকে ব্যবহার করতে পারবেন নিঃসন্দেহে।
থরে থরে মলাটবদ্ধ আছে ‘বিনয় কথকতা, স্মৃতিগদ্য, কবিকে নিয়ে কবিতা, বিনয়কে নিয়ে চিত্রনাট্য, বিনয় মজুমদার-এর সাক্ষাৎকার, আলাপচার, বিনয়ের আত্মকথন, অপ্রকাশিত ও অগ্রন্থিত বিনয়, বিনয়-কবিতার অনুবাদ, কবিতা থেকে চিত্রকলা, অ্যালবাম, উবাচ, বিনয়ের বংশলতিকা, বিনয়ের সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জী ও লেখক পরিচিতি। পৃষ্ঠা সংখ্যা-৮২৪।
একটা অভিযোগ এমন যে, বাঙালি বই ধারে পড়েন বেশি, কেনেন কম। এই বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আরেকটি কথা এই যে, একদামে পণ্য কেনা যাবে, কিন্তু বই কেনো নয়! বাস্তবতার নিরখেই আমার এ কথা বলা।
পাঠকের কাছে নিবেদন তাই বইটি কিনুন, পড়ুন, অন্য আলোয় আলোকিত হোন। ‘আশ্রয়’কে এগিয়ে দিতে ‘ এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার’ পাঠ জরুরী করে তুলুন। বিনয়কে যুগ যুগ জিইয়ে রাখুন মননে, চেতনে। কেননা বিনয় সেই মধুময় উচ্চারণ-
“পদ্মপাতার প’রে জল টলমল করে; কাছে কোনো
……………………………………ফুল তো দেখি না।
সাধ জাগে,- বড়ো সাধ জাগে-
ডুব দিয়ে দেখে আসি নধর জলের নিচে
আকাশের অভিমুখী উন্মুখ কুঁড়ি আছে কিনা।”
বই সম্পর্কিত তথ্য
গ্রন্থ : এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার
সম্পাদনা : এহসান হায়দার ও স্নিগ্ধদীপ চক্রবর্তী
প্রচ্ছদ : রাজীব দত্ত
বইয়ের সাইজ : প্রাইম সাইজ (বোর্ড বাইণ্ডিং, কাপড় জেল)
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৮২৪
পাঠকের দাম : ১৪৫০ টাকা
প্রকাশনা : আশ্রয় প্রকাশন
প্রকাশকাল : এপ্রিল ২০২১
গ্রন্থটি পেতে যোগাযোগ করুন :
আশ্রয় প্রকাশন : ০১৫৬৮ ২০০৮২৫, ই- মেইল : ash.bookspro@gmail.com
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ সেপ্টেম্বর ১৭,২০২১)