জবির একমাত্র খেলার মাঠ দখল করে মার্কেট নির্মাণ, প্রতিবাদে উত্তাল শিক্ষার্থীরা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় অবস্থিত ধূপখোলা মাঠ নামে পরিচিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ দখল করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃক মার্কেট নির্মাণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে প্রথমে ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে স্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে তারা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে রাস্তার উপর সকলে একত্রিত হয়ে রাস্তা অবরোধ করে স্লোগান দেয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় গাড়ি চলাচল। পুলিশ এসে বাধা প্রদান করলেও তারা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন। শিক্ষার্থীরা জানায় জবির খেলার মাঠ দখল করে মার্কেট নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে অবিলম্বে মার্কেট নির্মাণ বন্ধ করে তা ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান তারা।
জানা যায়, রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ধূপখোলা মাঠের জবি অংশে সীমানাপ্রাচীর তুলে ফেলে মাঠের সংস্কারের দায়িত্বে থাকা ডিএসসিসির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। দিনের বেলায় কাজ বন্ধ রাখলেও রাতের আঁধারে খনন কাজ করেন তারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, ধূপখোলা মাঠটি একটি মেগা প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। মাঠটিতে নির্মাণ করা হবে একটি বহুতল বাণিজ্যিক মার্কেট, পাশে একটি খেলার মাঠ, হাঁটার জন্য রাস্তা, ক্যাফেটেরিয়া ও পার্কিং লট।
এর আগে চলতি বছরের ১০ জুন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জোহা ও সিটি কর্পোরেশনর উপ-সহকারী প্রকৌশলী হরিদাস মল্লিক মাঠের ভেতর ম্যাপ অনুযায়ী চার কোণায় খুঁটি বসান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে না জানিয়ে মাঠের মধ্যে মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনার বিষয়টি নজরে আসার পর পরই ক্ষোভ প্রকাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গেন্ডারিয়া থানায় একটি জিডি করে। আলোচনায় বসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সাথেও। তারপরও বন্ধ হয়নি মেগা প্রজেক্টের নামে খেলার মাঠ দখলের এই কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় অবস্থিত ধুপখোলা মাঠটি ১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীদের খেলার কোনো মাঠ না থাকায় ৭ একর জমির উপর অবস্থিত মাঠটি তিন ভাগে ভাগ করেন। এক ভাগ তৎকালীন সরকারি জগন্নাথ কলেজকে ব্যবহারের মৌখিক অনুমতি প্রদান করেন। আর একটি অংশ ‘ইস্ট এন্ড খেলার মাঠ’ নামে একটি ক্লাবের কর্তৃত্বে রয়েছে। অপর অংশটি রাখা হয় জনসাধারণ খেলার জন্য।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য এটাই একমাত্র খেলার মাঠ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও স্থানীয় শিশুকিশোররাও এই মাঠে নিয়মিত খেলাধুলা করে। এটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে হলেও প্রতিবছর খেলাধুলা বিষয়ক বিভিন্ন আয়োজন এই মাঠেই করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সমাবর্তনও এই মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১)