‘গুরু’ জেমসের জন্মদিন আজ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জেমস, নাম শুনলেই একটি ছবি ভেসে ওঠে সবার মননে, ভেসে ওঠে এক রকস্টারের অবয়ব। যার গানে বহুরাত নির্ঘুম কেটে যায় হাজারো তরুণের, যে না থাকলে জমে না কোনো উৎসবের আসর, আজ সেই জেমসের জন্মদিন। যার কথা বলছি তিনি দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল নগর বাউলের কর্ণধার এবং ভোকালিস্ট মাহফুজ আনাম। যিনি জেমস নামেই উপমহাদেশে পরিচিত। কিংবদন্তি এই রকস্টার শুধুই জেমস নামে নন, ভক্তদের কাছে তিনি আবার শুধুই গুরু।
৫৬ পেরিয়ে ৫৭ বছরে পা দিলেন এই রক লিজেন্ড। ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন জেমস। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে।
জেমসের জীবন বেশ বাঁক বদলের, অনেক গল্পের। তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারী, যিনি পরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরিবারের অমতেই সংগীতচর্চা শুরু করেন জেমস। বাবার সঙ্গে গান নিয়ে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন। সংগীতের নেশায় ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান। চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিং নামক একটি বোর্ডিং-এ তিনি থাকতে শুরু করেন। সেখানে থেকেই তার সংগীতের ক্যারিয়ার শুরু হয়।
১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ফিলিংস’ নামক একটি ব্যান্ড। জেমস নিজেই ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তার প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ প্রকাশ পায়। যদিও অ্যালবামটি সে সময়ের শ্রোতাদের গান শোনার রুচির সঙ্গে একটু ভিন্ন মেজাজের হওয়ায় জনপ্রিয়তা পায়নি। পরে ১৯৮৮ সালে ‘অনন্যা’ নামের অ্যালবাম রিলিজ করে সুপারহিট হয়ে যান জেমস।
এরপর ১৯৯০ সালে ‘জেল থেকে বলছি’, ১৯৯৬ ‘নগর বাউল’, ১৯৯৮ সালে ‘লেইস ফিতা লেইস’, ১৯৯৯ সালে ‘কালেকশন অফ ফিলিংস’ অ্যালবামগুলো ফিলিংস ব্যান্ড থেকে বের হয়।
১৯৯৬ সালে ফিলিংস ব্যান্ড থেকে ‘নগরবাউল’ প্রকাশের পর সেটি ব্যাপক সফলতা পেয়েছিল। সেই সুবাদে ব্যান্ডের নাম ফিলিংস থেকে নগরবাউল রাখেন জেমস। আর এই নামে ব্যান্ড থেকে প্রকাশিত একমাত্র অ্যালবাম ‘দুষ্টু ছেলের দল’।
ব্যান্ড তারকা হলেও জেমস মূলত একক শিল্পী হিসেবে অধিক জনপ্রিয় ও সফল। যার সুবাদে তিনি গান করেছেন বিশ্বের অন্যতম সিনে ইন্ডাস্ট্রি বলিউডেও। মুম্বাইয়ের এই সিনে জগতে জেমস চারটি সিনেমায় গান করেছেন। আর পেয়েছেন সাফল্য। ২০০৬ সালে ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমায় ‘ভিগি ভিগি’ এবং ‘ও লামহে’ সিনেমায় ‘চাল চালে’ গান দুটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। এর মধ্যে ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ভারত এবং বাংলাদেশ দুই দেশেই ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়েছিল। এছাড়া ২০০৭ সালের আলোচিত সিনেমা ‘লাইফ ইন অ্যা মেট্রো’ সিনেমায় তিনি ‘রিশতে, আলভিদা’ গান করেছেন। সেটিও ছিল সফল। তারপর ২০১৩ সালে আবারও বলিউডে গান করেন জেমস। ‘ওয়ার্নিং থ্রিডি’ সিনেমায় তার সেই গানের নাম ‘বেবাসি’।
বলিউডে জেমসের পদচারণা সাফল্যমণ্ডিত। তাই বলে তিনি সেখানে স্থায়ী হয়ে যাননি। বরং নিজ দেশেই থেকে গেছেন এই তারকা। গান করেছেন দেশের শ্রোতাদের জন্যই।
দেশের সিনেমায় জেমসের জনপ্রিয় গানের সংখ্যাও কম নয়। ‘কষ্ট’ সিনেমায় ‘দশমাস দশদিন’, ‘মনের সাথে যুদ্ধ’ সিনেমায় ‘আসবার কালে আসলাম একা’, ‘নারীর মন’ সিনেমায় ‘মীরাবাঈ’, ‘দেশা দ্য লিডার’ সিনেয়াম্য ‘দেশা আসছে’, ‘সত্তা’ সিনেমায় ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’, ‘আগুন আমার নাম’ সিনেমায় ‘পাগলা হাওয়ার তরে’, ‘ওয়ার্নিং’ সিনেমায় ‘এত কষ্ট কষ্ট লাগে কেন অন্তরে’ এবং ‘সুইটহার্ট’ সিনেমায় ‘বিধাতা’ গানগুলো শ্রোতাদের অসামান্য ভালোবাসা পেয়েছে।
জেমসের গাওয়া অন্যান্য জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘তারায় তারায়’, ‘লেইস ফিতা লেইস’, ‘সুলতানা বিবিয়ানা’, ‘সুস্মিতার সবুজ ওড়না’, ‘হতেও পারে এই দেখা শেষ দেখা’, ‘কবিতা তুমি স্বপ্নচারিণী’, ‘দুস্টু ছেলের দল’, ‘দিদিমনি’, ‘দুঃখিনী দুঃখ করোনা’, ‘তোর সব কিছুতে নয় ছয়’, ‘বাবা কত দিন দেখি না তোমায়’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া’, ‘লিখতে পারি না কোনো গান’, ‘এক নদী যমুনা’ ইত্যাদি।
গান দিয়ে নিজের প্রাপ্তির খাতা দারুণভাবে সমৃদ্ধ করেছেন জেমস। ‘সত্তা’ এবং ‘দেশা দ্য লিডার’ সিনেমায় গান গেয়ে দুইবার জিতেছেন শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি অসামান্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। বিশেষ করে দেশের বাইরে ভারতের মানুষ তাকে বিপুল শ্রদ্ধা করে। সে দেশের তারকাদের কাছেও জেমস একজন তারকা।
জেমসের ব্যক্তিজীবনের গল্প বরাবরই আড়ালে থেকেছে। তিনি দুটি বিয়ে করেছেন। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন রথি। তিনি ছিলেন একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। ১৯৯১ সালে বিয়ের পর ২০০৩ সালে তারা আলাদা হয়ে যান। রথির সঙ্গে বিচ্ছেদের আগেই ২০০২ সালে জেমস বিয়ে করেন বেনজির সাজ্জাদকে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০২ অক্টোবর, ২০২১)