দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জালিয়াতির মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ঋণের চার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ ১১ জনের মামলার রায় আজ মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম রায় ঘোষণার এ তারিখ নির্ধারণ করেন। এর মধ্য দিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে দেশে প্রথমবারের মতো কোনো সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলার রায় হতে যাচ্ছে।

দুদকের আইনজীবী মনে করেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তারা (আসামিরা) সর্বোচ্চ শাস্তি (যাবজ্জীবন) পাবেন। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা মনে করেন, রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তাই তারা খালাস পাবেন।

যদিও মামলা চলাকালে বিচারপতি সিনহাসহ চারজন পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবীকে দেখা যায়নি। পলাতকরা হলেন- ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, টাঙ্গাইলের রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী শান্তি রায় সিমি। দণ্ডবিধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের যেসব ধারায় এ মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, তাতে অপরাধ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন শাস্তি হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্নিষ্ট আইনজীবীরা।

অন্য সাত আসামি হলেন- ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী), সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ও একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা। তাদের মধ্যে বাবুল চিশতী কারাগারে আছেন, বাকিরা জামিনে আছেন।

এর আগে গত ২৪ আগস্ট মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। এ মামলায় ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলা তদন্ত করে একই বছরের ডিসেম্বরে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন দুদক পরিচালক বেনজীর আহমেদ। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের আগস্টে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন বিচারক।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৬ সালের আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নেন। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিনহা। পরে সেই টাকা আত্মসাৎ করেন আসামিরা।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।

বিচারপতি সিনহা বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। তবে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বসেই একটি বই প্রকাশ করেন। তাতে তিনি দাবি করেন, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৫ অক্টোবর, ২০২১)