দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শিউলি গাছে থোকা থোকা ফুল জানিয়ে দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে দুর্গাপূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বর্ণিল সাজে সেজে উঠছে দেবি দুর্গা আর তার পরিবারের সদস্যরা।

পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতে বাকি আর মাত্র দুই দিন। রং-তুলির শেষ আচরে রূপ ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পীরা। সোমবার সকালে দেবী দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এরই মধ্যে উৎসবের আমেজ লেগেছে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সীদের মনে।

গত বুধবার মহালয়ার পিতৃপক্ষের সমাপ্তিতে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। আগামী সোমবার ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ১৫ অক্টোবর দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোথাও কোথাও শেষ হয়েছে প্রতিমার রং-তুলির কাজ। আবার কোথাও কোথাও অর্ধেক শেষ হয়েছে। এই প্রতিমাশিল্পীদের সঙ্গে কাজের ব্যস্ততা বেড়েছে ডেকোরেটর কর্মীদেরও। চলছে বাঁশ কাঠের কর্মযোগ। অনেকে আবার আলোকসজ্জার কাজে ব্যস্ত। আলোকসজ্জা আর রং-তুলির আঁচরের মধ্যে উৎসবের আমেজে মেতেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার শান্ত রায় বলেন, ‘আমাদের এলাকার মণ্ডপের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখন প্রতিমার সাজ-সজ্জার কাজ চলছে। শনিবার (আজ) কাজ শেষ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ডেকোরেশনের কাজও প্রায় শেষের দিকে। কাজ শেষ না হলেও মন্দিরে এখনই উৎসবের আমেজ লেগে গেছে।’ মন্দির কমিটি পূজা উদযাপনে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সোচ্চার অবস্থানে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

রাজবাড়ির শুভংকর ঘোষ বলেন, ‘আমাদের প্রতিমা সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হয়ে গেছে। এখন ডেকোরেশনের কাজ কিছুটা বাকি রয়েছে।’

কুষ্টিয়া পার্থ দে জানান তাদের মণ্ডপের সব কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন উৎসব শুরুর অপেক্ষা। তিনি বলেন, ‘সাজসজ্জা শেষে আমাদের প্রতিমা ঢেকে রাখা হয়েছে। ষষ্ঠী পূজার দিনে প্রতিমা খোলা হবে।’

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুসারে এবার সারা দেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৯০৫টি বেশি। গত বছর করোনাকালে ৩০ হাজার ২১৩টি মণ্ডপে এই উৎসব হয়েছিল। এবার রাজধানীতেও বৃদ্ধি পেয়েছে পূজামণ্ডপের সংখ্যা। গত বছরের ২৩৪টি মণ্ডপের জায়গায় এবার পূজা উদযাপন হবে ২৩৮টি মণ্ডপে।

এদিকে চলতি বছর প্রধানমন্ত্রী দুর্গাপূজা উপলক্ষে তিন কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন, যা গত বাছরের চেয়ে ১ কোটি টাকা বেশি।

করোনা মহামারিতে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বশে নেমে এসেছে। গত কয়েক দিন ধরে করোনা শনাক্তের হার তিনের নিচে। তারপরও সতর্কতা হিসেবে দুর্গোৎসবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব পরিপালনের আহ্বান জানয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

গত বুধবার উপসচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ কুদ্দুস আলী সরকার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে পূজামণ্ডপগুলোতে আরোপিত বিধিনিষেধের মধ্যে পুরোহিত এবং উপস্থিত পূজারিদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। যেসব মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে সেসব মন্দিরের প্রবেশপথে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রবেশপথে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিমা বির্সজনের ব্যবস্থা করতে হবে।

আজান ও নামাজের সময় মসজিদ পার্শ্ববর্তী পূজামণ্ডপগুলোতে পূজা চলাকালে ও বিসর্জনকালে শব্দযন্ত্রের ব্যবহার সীমিত রাখার জন্য এবং উচ্চস্বরে শব্দযন্ত্র ব্যবহার না করারও আহ্বান জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সব ধর্মীয় রীতি-নীতি, পূজা-অর্চনা, মাঙ্গলিক কার্যাদি, প্রতিমা বিসর্জনসহ অন্যান্য কার্যক্রম যথাযথভাবে প্রতিপালন করার কথা বলা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৯ অক্টোবর, ২০২১)