আপন জুয়েলার্সের সাফাতসহ ৫ জনের যে শাস্তি চাচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: চাঞ্চল্যকর ঘটনা রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলা। এই মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ ৫ জনের সর্বোচ্চ সাজা (যাবজ্জীবন কারাদণ্ড) চাচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে আসামিদের খালাস দাবি করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আজ মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের আদালত এই মামলার রায় ঘোষণা করা করবেন।
মামলার অন্য ৪ আসামি হলো- সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিম, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী এবং গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা আহমেদ (অরেঞ্জ) বলেন, ‘এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। মামলাটি যেহেতু ২০২০ সালের সংশোধনের আগে দায়ের করা হয়েছে, সেহেতু সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তে যাবজ্জীবনের বিধান রয়েছে। রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা (যাবজ্জীবন) প্রত্যাশা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলার বিচার আরও আগেই শেষ হয়ে যেত কিন্তু সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচার শেষ হয়নি। আর মাঝে করোনার কারণে আদালত সাধারণ ছুটিতে থাকায় বিচার কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল। যাই হোক চাঞ্চল্যকর মামলাটির বিচার আজই শেষ হবে।’
বাদী পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি তারা দোষী। আশা করছি আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা (যাবজ্জীবন কারাদণ্ড) হবে।’
অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি সত্য নয়। ধর্ষণের কোনো সিম্পটম পাওয়া যায়নি। মেডিক্যাল রিপোর্টে তাদের বিরুদ্ধে ৯(১) ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ডাক্তার এসে সাক্ষ্যেও এটা বলে গেছেন। ট্রায়ালের মাধ্যমে আসামিদের নিরাপরাধ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, তারা খালাস ও ন্যায়বিচার পাবেন।’
গত ৩ অক্টোবর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার এই তারিখ ঠিক করেন আদালত। ওইদিন ৫ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ২৯ আগস্ট আত্মপক্ষ শুনানিতে সাফাতসহ ৫ আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। গত ২২ আগস্ট মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। চার্জশিটভুক্ত ৪৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী এবং তার বান্ধবী ও বন্ধুকে আটকে রাখে। ওই দুইজন ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।
অভিযোগে বলা হয়, দুই ছাত্রীকে অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। বাদী ও তার বান্ধবীকে জোর করে সাফাত আহমেদ ও তার বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করে। ওই ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন এক শিক্ষার্থী।
২০১৭ সালের ৭ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করেন। এরপর ২০১৮ সালের ১৩ জুলাই একই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
চার্জশিটে আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে। অপর আসামি সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ওই আইনের ৩০ ধারায় ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ করা হয়।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১২ অক্টোবর, ২০২১)