কপর্দকহীন বাংলাদেশি শ্রমিক মুহূর্তেই ১ মিলিয়ন দিরহামের মালিক
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: দুবাইতে গত শনিবার রাতে লাইভ মাহজুজ নামক লটারির ড্রটি ছিল রূপকথার গল্প সত্যিতে পরিণত হওয়ার মতো একটি ঘটনা। লটারির এই ড্র দুবাই শহরের একজন সাধারণ প্রবাসী কর্মীকে ভাগ্যের স্বপ্নযানে তুলে ১ মিলিয়ন আমিরাতি দিরহামের মালিক করে দিয়েছে।
লটারি জেতার আগে পর্যন্ত দুবাইতে প্রবাসী বাংলাদেশি ক্রেন অপারেটর আব্দুল কাদেরের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল না। অর্থাৎ এক মিলিয়ন দিরহাম জেতার আগ পর্যন্ত দেশটির কোনো ব্যাংকে তার এক দিরহামও জমা ছিল না।
আজ বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) এ খবর দিয়েছে খালিজ টাইমস।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে তথা ইউএই-র দুবাই শহরে অনুষ্ঠিত ৪৬তম সাপ্তাহিক লাইভ মাহজুজ লটারি ড্র-এর দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছেন ৩২ বছর বয়সী আব্দুল কাদের। হঠাৎ করেই রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেলেন বাংলাদেশি এই যুবককে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে দেশটির মিডিয়া ও প্রবাসী কমিউনিটিতে। তার কেনা টিকিটের মধ্যে পাঁচটি নম্বর দ্বিতীয় পুরস্কার বিজয়ী নম্বরের সঙ্গে মিলে যেতেই ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা।
এই লটারি জয়ের মাধ্যমে দুবাইতে লটারির এরকম বড় ধরনের পুরস্কার জেতা প্রথম বাংলাদেশি হওয়ার গৌরবও অর্জন করলেন কাদের। একই সঙ্গে চলতি বছর এই লটারি বিজয়ী ১৬ তম মিলিয়নেয়ার ( ১ মিলিয়ন দিরহাম আজকের মুদ্রা বিনিময় দর অনুযায়ী দুই কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার বাংলাদেশি টাকা) তিনি।
পুরস্কার জেতার পর এক প্রতিক্রিয়ায় কৌতুক ছলে এই উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশি বলেন, এক মিলিয়ন দিরহামে কতগুলি শূন্য থাকে তার হিসাব মিলাতে পারছি না! আবেগাক্রান্ত বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, ১০ বছর আগে দুবাইতে এসেছি, আমার উপার্জন করা প্রতিটি দিরহাম বাংলাদেশে আমার পরিবারের কাছে পাঠানো হয়েছে। দুই সন্তানের এই পিতা জানান, তার আয় করা অর্থের সিংহভাগই পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য দেশে পাঠাতে হতো বিধায় নিজের মোবাইল ফোনের জন্য ইন্টারনেট ডেটার প্যাকেজ কেনাটাও কষ্টকর ছিল তার পক্ষে।
লটারি বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণের অভিজ্ঞতার বয়ান দিতে গিয়ে কাদের জানান, সেদিন নাইট শিফটে কাজ করার সময় নিজের ফোনে লটারির ড্র-এর শো লাইভ দেখার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু তখনি তার ফোনের ডেটা বাফারিং শুরু করে। নিরূপায় হয়ে অবশেষে তার রুমমেটকে ফোন করে ফলাফল চেক করতে বলেন। রুমমেট জানান যে এইবার ছয়টি নম্বরের মধ্যে কাদেরের কেনা টিকিটের পাঁচটিই মিলে গেছে!
কাদের বলেন, এটা একটা অসাধারণ ব্যাপার যে আমার মতো ছা-পোষা মানুষও মাহজুজে অংশ নেওয়ার সামর্থ্য রাখে। এবার নিয়ে তিনি পঞ্চমবারের মতো মাহজুজ লটারিতে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানান। মিলিয়ন দিরহাম প্রাইজ জেতার বিষয়টি স্ত্রীকে জানাতে বিলম্বে তার তর সইছে না বলেও জানান কাদের। স্ত্রী সম্পর্কে কাদের বলেন, তিনি সর্বদাই অনেক ধৈর্যশীল এবং বোধবুদ্ধিসম্পন্ন একজন নারী।
কোটিপতি বনে যাওয়ার পর তার পরবর্তী পরিকল্পনার বিষয়ে বলতে গিয়ে মিডিয়াকে কাদের বলেন, প্রথমেই আমি আমার স্ত্রীর জন্য কিছু স্বর্ণ কিনতে যাব। তাকে এক রতি স্বর্ণ কিনে দেওয়ার মতো অর্থও আমি সঞ্চয় করতে পারিনি এতদিন।
সন্তানরা তাদের সেসব স্বপ্ন ছুঁতে পারবে যা আমি পারিনি
আব্দুল কাদের আরও আরো বলেন, পুরস্কারের অর্থের একটি অংশ দিয়ে আমার ভাই এবং বাবাকে সাহায্য করতে চাই, যারা অনেক আর্থিক সংকটের মোকাবেলা করছেন। তারপরে, আমি একটি বাড়ি তৈরি করে এটি ভাড়া দেব- এটি ভবিষ্যতের জন্য ধারাবাহিক একটি আয়ের পথ নিশ্চিত করবে।
তিনি তার সন্তানদের শিক্ষার জন্য জেতা অর্থের একটি অংশ রেখে দেবেন জানিয়ে বলেন, আমি কেবল তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি এবং পরিবারকে সহায়তায় আয়রোজগার করার জন্য স্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছিল। লটারি জেতা এই অর্থ নিশ্চিত করবে যে, আমার পক্ষে যা সম্ভব হয়নি আমার সন্তানরা তা দিয়ে তাদের সেসব স্বপ্ন ছুঁতে পারবে।
পরিবারের সব চাহিদার মেটানোর পর তার অর্থ একটি গরুর খামারে গড়ার স্বপ্ন দেখছেন।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৪ অক্টোবর, ২০২১)