কসর নামাজের বিধানবিধান ও ফজিলত
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: কসর আররি শব্দ। এর অর্থ হলো কম করা, কমানো। ইসলামি শরীয়তে কোনো ব্যক্তি যদি ৪৮ মাইল বা তারও বেশি দূরত্বের ভ্রমণে বাড়ি থেকে বের হন, তাহলে তিনি মুসাফির। আর তিনি যদি সেখানে ১৫ দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করেন, তবে চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়বেন। আল্লাহ তাআলা এই সংক্ষেপ করার মাঝে কল্যাণ রেখেছেন।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যখন জমিনে সফর করবে, তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর (কম) করায় কোনো আপত্তি নেই।’ (সূরা: নিসা, আয়াত: ১০)।
কসর নামাজের নিয়ম
কসর নামাজের নিয়ম হলো কেবল চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ যেমন- জোহর, আসর ও এশার নামাজ চার রাকাতের পরিবর্তে দুই রাকাত পড়া। এ ক্ষেত্রে মুসাফির ব্যক্তি ইমামতি করলে মুক্তাদিদের আগেই বলে দিতে হবে যে, তিনি মুসাফির এবং দুই রাকাত পড়ে সালাম ফেরাবেন এবং মুকিম নামাজিরা দাঁড়িয়ে বাকি দুই রাকাত পড়ে নেবেন। তবে মুসাফির ব্যক্তি যদি মুকিম (স্থানীয়) ইমামের পেছনে নামাজ পড়েন, তাহলে ইমামের অনুসরণে তিনিও চার রাকাত পড়বেন।
আর মুসাফির অবস্থায় যদি কোনো নামাজ কাজা হয়ে যায় আর তা বাড়ি ফিরে পড়েন, তাহলে কসরই পড়বেন এবং বাড়ি থাকা অবস্থায় কোনো কাজা নামাজ যদি সফরে আদায় করেন, তবে তা পূর্ণ নামাজই পড়তে হবে। মুসাফির ব্যক্তির ব্যস্ততা থাকলে ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নত নামাজ ছেড়ে দেবেন। তবে ব্যস্ততা না থাকলে সুন্নত পড়া উত্তম। তবে দুই রাকাত, তিন রাকাত ফরজ এবং ওয়াজিব নামাজ যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।
কসর নামাজের ফজিলত
কসর নামাজের ফজিলত অপরিসীম। আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় বান্দাদের সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য করেই সহজ বিধান দিয়েছেন। ইসলাম মানুষের কল্যাণের জন্য, মুক্তির জন্য। আর মুসাফির সফরে অনেক সমস্যায় থাকেন, যে কারণে ইসলাম নামাজের মতো এত বড় ইবাদতেও ছাড় দিয়েছে। মূলত এই কসর নামাজের বিধানের মধ্যে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বড় শিক্ষা রয়েছে; তাহলো কোনো অবস্থায়ই ফরজ ইবাদত অলসতার কারণে বা সমস্যা থাকার কারণে পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
কসরের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সফরে নামাজকে কসর কর, এর মধ্যেই রয়েছে উত্তম প্রতিদান।’ (বায়হাকী)।
মুসাফির ও কসর নামাজ সংক্রান্ত কিছু আলোচনা
মুসাফির কাকে বলে?
মুসাফির শব্দটি আররি। এর অর্থ হলো সফরকারী, ভ্রমণকারী।
‘কোন ব্যক্তির স্বাভাবিক বিশ্রাম বজায় রেখে মধ্যম পন্থার পথ চলার তিন বা ততোধিক দিনের ভ্রমণ পথ অতিক্রমের ইচ্ছা নিয়ে নিজ আবাসস্থল থেকে যাত্রা শুরু করাকে সফর বলে।’ আর যিনি সফর করবেন তাকে বলা হয় ‘মুসাফির’। মুসাফিরের জন্য শরীয়তের অনেক বিধানই সহজ ও শিথিল করে দেওয়া হয়। যেমন-
(১) ফরজ রোজা ভেঙ্গে ফেলে পরে কাযা করার অনুমতি।
(২) চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ কসর করে দুই রাকাত পড়া।
(৩) যানবাহনে উপবিষ্ট থাকা অবস্থায় নামাজ আদায়ের অনুমতি।
(৪) জোহর-আসর ও মাগরিব-এশা একত্রে পড়ার অনুমতি।
কতটুকু দূরত্ব সফরের নিয়তে কসর হবে?
অধিকাংশ আলেমদের মতে- সাধারণত ৪৮ মাইল দূরত্বের পথ অতিক্রমের নিয়ত করে ঘর থেকে বের হলে নামাজ কসর করতে হবে।
কসর শুরু করার স্থান কী হবে?
সফরকারী ব্যক্তি সফরের নিয়তে ঘর থেকে বের হলেও সে নিজ এলাকা/মহল্লায় থাকা অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই নামাজ আদায় করবে। যখন সে এলাকা ত্যাগ করবে, তখন থেকে নামাজ কসর করবে।
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করে বলেন, নিশ্চয়ই রাসূল (সা.) (বিদায় হজ্জের নিয়তে) মক্কা সফরের সময় মদিনায় জোহরের নামাজ চার রাকাত আদায় করেছেন। আর (সফর শুরু করে) যুলহুলায়ফা নামক স্থানে পৌঁছে আসরের নামাজ দু’রাকাত আদায় করেছেন। (বুখারি, মুসলিম, মেশকাত-১২৫৪)।
এখানে যুলহুলায়ফা নামক স্থানটি মদিনা হতে প্রায় মাইল দূরে অবস্থিত, যেখানে এসে রাসূল (সা.) নামাজ কসর করেছেন।
উল্লেখ্য, নারীরা বিবাহের আগ পর্যন্ত তার বাবার বাড়িতে স্থায়ী আবাস হিসেবে মুকিম থাকবে। তবে বিবাহের পর যদি স্বামীর বাড়িতে মৌলিকভাবে থাকে এবং বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে, তাহলে স্বামীর বাড়ি তার মৌলিক আবাসন হিসেবে ধর্তব্য হবে এবং বাবার বাড়িতে মুসাফির থাকবে, আর যদি বাবার বাড়িতে মৌলিকভাবে থাকে, তাহলে তা তার মূল অবস্থানস্থল হিসেবেই বাকি থাকবে- (আল বাহরুর রায়েক ২/১২৮, রদ্দুল মুহতার ২/১৩১)।
আর পুরুষরা তার শ্বশুরবাড়িতে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে মুসাফিরই থাকবে। হ্যাঁ, কেউ যদি সেখানে স্থায়ী আবাস করে নেয়, তাহলে তা ভিন্ন কথা।
কতদিনের নিয়তে সফর করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে কসর করবেন?
যে স্থানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সফর করা হবে, সে স্থানে যদি ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত হয়, তাহলে ব্যক্তি গন্তব্যস্থলে পৌঁছে তার নামাজ কসর করবেন।
আর যদি গন্তব্যস্থলে তার ১৫ দিনের বেশি থাকার নিয়ত হয়, তাহলে সে স্বাভাবিক চার রাকায়াত নামাজই পড়বেন।
যদি কেহ ১৫ দিনের কম অবস্থানের নিয়তে বের হয়ে ১৩/১৪ দিন পর দেখেন তার প্রয়োজন পূর্ণ হয়নি, তিনি আবারো ১৫ দিনের কম নিয়ত করে কসর নামাজ পড়তে পারবেন অন্য শহরে বাসিন্দাগণ নিজ বাড়িতে সফর করলে কোনো কসর পড়া যাবে না। শুধু যাত্রা পথে কসর করবেন।
রাসূল (সা.) সফরে ফজরের সুন্নত ও বিতরের তিন রাকাত ছাড়া অন্য কোনো সুন্নত নামাজ পড়েননি।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ২৯ অক্টোবর, ২০২১)