চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ছে ছাত্ররা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারির ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দ্রুত হল ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এরপরই শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে শুরু করেছে।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা গেছে ছাত্ররা হল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন আহত হয়। শনিবার সকাল ৯টার দিকে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিকেলে জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে কমিটি। অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে চমেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আহতরা হলেন- মাহফুজুল হক, নাইমুল ইসলাম ও আকিব হোসেন। পরে তাদের চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে আকিব শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী, আর মাহফুজ ও নাইমুল ইসলাম সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
চমেকের শিক্ষার্থী আমীর হোসেন বলেন, এতদিন করোনার কারণে কলেজ বন্ধ ছিল। আজ আবার বন্ধ ঘোষণা করা হলো। আমরা কলেজে মারামারি চাই না।
তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ি নোয়াখালী। হুট করে কলেজ-হোস্টেল বন্ধ করে দেওয়ায় বাড়ি যাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
তানভীর হোসেন নামে তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। মারামারি কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেছে। ছাত্রাবাস ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। কীভাবে যাব চিন্তায় আছি। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণার দাবি জানাই।
ফিরোজ আহমদ নামে তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী হল ছাড়ার সময় বলেন, কলেজ বন্ধের কারণে ছাত্ররা ক্ষতিগ্রস্ত হলো। ক্যাম্পাস দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আগামী দুই নভেম্বর আমার একটি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কলেজ বন্ধ করায় পরীক্ষা কখন হবে জানি না। বিকেল পাঁচটার পর কলেজ প্রশাসন পুলিশ দিয়ে আমাদেরকে বের করে দিয়েছে।
এর আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারির ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দুপুরের দিকে। এরপর শিক্ষার্থীদের দ্রুত হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শাহেনা আক্তার বলেন, শিক্ষার্থীদের বিকেল ৫টার মধ্যে হল ছাড়তে হবে। তবে ছাত্রীরা পরেও যেতে পারবে। কারণ দূরের জেলায় বাড়ি এমন অনেক ছাত্রী আছে।
অধ্যক্ষ বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া মারামারির ঘটনায় আহত হয়ে একজন হাসপাতালে ভর্তি আছে। যেহেতু একজন আহত হয়েছে সে কারণে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছি। এ ঘটনায় আইনগত যে ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সার্জারি বিভাগের প্রফেসর মতিউর রহমানকে। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সংঘর্ষে জড়ানো একটি পক্ষ চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও আরেকটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেয় বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রথমে ছাত্রদের মধ্যে ঝামেলা হয়। এরপর মেডিকেল কলেজে আমরা পুলিশ মোতায়েন করি। আজ সকাল ১০টার দিকে আকিব নামের এক ছাত্রকে মেডিকেল কলেজের মূল গেটের কাছাকাছি পপুলার হাসপাতালের সামনে তার মাথায় আঘাত করা হয়। এতে তার মাথা ফেটে যায়। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিবদমান দুই গ্রুপের একটি উত্তেজনা আছে। আমরা প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছি। আমরা সর্তক আছি।
শনিবার সকালে চমেক ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারিতে তিনজন আহত হয়েছেন। তারা হলে- মাহফুজুল হক (২৩), নাইমুল ইসলাম (২০) এবং আকিব হোসেন (২০)।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/৩১ অক্টোবর, ২০২১)