দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ভার্চুয়াল আদালতের সুযোগ নিয়ে আইনজীবী ছাড়াই একের পর এক বিচার প্রার্থীর দেশের সর্বোচ্চ আদালতে সরাসরি দাঁড়ানো ফ্যাশন হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন আপিল বিভাগ।

আজ (সোমবার) বেশ কয়েকজন বিচারপ্রার্থী সরাসরি আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষ থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে মামলার নিষ্পত্তির আবেদন করলে আদালত এ মন্তব্য করেন।

সকালে আপিল বিভাগের বিচার কাজ শুরু হলে প্রথমেই দুই নারী বিচারপ্রার্থী দাড়িঁয়ে তাদের চাকরি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করতে আবেদন করেন। মানবিক দৃষ্টি দিয়ে আদালতের কাছে বিচার প্রার্থনা করেন।

তখন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমাদের আইন মাফিক চলতে হবে। মানবিক আবেদন করবেন সরকারের কাছে। আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবো না। আমরা দেখব আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে। মানবিক দৃষ্টিতে দেখবে সরকার। মানবিক এতটুকুই করতে পারব মামলাটা তাড়াতাড়ি শুনব।

পরে আগামীকাল তাদের মামলাটি শুনানির জন্য দিন ঠিক করে দেন।

ওই দুই নারীর আবেদনের পরই আরেকজন বিচারপ্রার্থী দাঁড়ান তার আবেদন নিয়ে। তিনি নিজেকে বেকার যুবক দাবি করে বলেন, আমি বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরির জন্য দরখাস্ত করেছিলাম। সেই মামলায় হাইকোর্ট থেকে রায় পেয়েছি। মামলাটি আপিল বিভাগে পেন্ডিং আছে। কিন্তু রেলওয়ে আমাদের নিয়োগ দিচ্ছে না।

এটি দেখে প্রধান বিচারপতি বলেন, এটি তো মহামুশকিল। আপনার আইনজীবী কই? এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, চেম্বার আদালতে আবেদন না দিয়ে আপিলে চলে আসছেন কেন? একটা ফ্যাশন শুরু হয়ে গেছে আইনজীবী ছাড়া কোর্টে এসে দাঁড়িয়ে যাওয়া।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনার আইনজীবী কে? জবাবে ওই বিচারপ্রার্থী বলেন, পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু। তখন বিচারপতি ইমান আলী বলেন, আপনার আইনজীবী থাকতে আপনি এখানে দাড়াঁতে পারেন না।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনার মামলার অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড যিনি আছেন তাকে দিয়ে আবেদন দেন।

এর পর আরেকজন আদালতের সামনে দাড়িঁয়ে বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমি মসজিদের মুয়াজ্জিন। আমি খুবই গরিব মানুষ। আমি মানুষের যাকাত ফেতরা নিয়ে খাই। স্যার আমার মামলটা বন্ধ হয়ে রয়েছে। যদি দয়া করে একটু দেখতেন।

একের পর এক এভাবে আইনজীবী ছাড়া সরাসরি কোর্টে দাঁড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, এর পর থেকে যেসব আইনজীবীদের ক্লায়েন্ট সরাসরি কোর্টে এসে দাঁড়াবে, আমরা তার সনদ বাতিল করে দেব। আগামীকাল থেকে যারা দাঁড়াবে তাদের আইনজীবী থাকলে তাদের সনদ আমরা পাচঁজন মিলে বাতিল করে দেব।

আপনার আইনজীবী আছে কিনা আদালতের এমন প্রশ্নের জবাবে ওই বিচারপ্রার্থী বলেন, উকিল আছে। অনেক টাকা চায়। তখন আদালত বলেন, আপনি আইনজীবী না রেখে থাকলে আপনারটা শুনব। আপনার মামলার নম্বর দিয়ে যান। পরে আদালত কার্যতালিকা অনুসারে শুনানি শুরু করেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০১ নভেম্বর, ২০২১)