দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ভয়াল ১৫ নভেম্বর। দুঃসহ স্মৃতিবিজড়িত সিডর দিবস। ২০০৭ সালের এই দিনে সুপার সাইক্লোন আঘাত হানে উপকূলীয় এলাকায়। লণ্ডভণ্ড করে দেয় প্রকৃতি ও মানবতাকে। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলাসহ সবকটি উপজেলা। এ ভয়াবহ স্মৃতি আর বেদনায় প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে জড়িয়ে আছে।

সিডরের ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এ স্মৃতি যেন আজও উপকূলের মানুষের মনে ভয়াবহতা বয়ে বেড়াচ্ছে। সিডরের অগ্নিমূর্তির কথা মনে করে অনেকে এখনো আঁতকে উঠে নিজের অজান্তে।

ভয়াল ওই সিডরে বলেশ্বরের উন্মত্ততায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় শরণখোলাসহ ওই এলাকার জনপথ। চারদিক মানুষ আর পশুপাখির লাশে একাকার হয়ে যায়। পরবর্তী সময় সৌদি সরকার, মুসলিম এইড এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন এনজিও উপকূলবাসীর পাশে দাঁড়ায়। যদিও এতে ভাগ্য ফেরেনি ক্ষতিগ্রস্তদের।

১৫ নভেম্বর সকালে ঘোষণা হয় ‘সিডর’ নামের ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের উপকূলে। দুপুর নাগাদ তা বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে। ঘোষিত ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতে আতঙ্কিত হতে থাকে উপকূলবাসী কেউ ছোটে আশ্রয় কেন্দ্রে, কেউ অবস্থান নেয় বাড়িতে।

মুহূর্তে উপকূলের মানুষ যেন আরও মহাবিপদের মুখোমুখি হয়ে যায়। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তারা। দমকা হাওয়া বইতে থাকে। সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। কিছু মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারলেও বেশির ভাগ মানুষ থেকে যায় নিজ বাড়িতে। রাত ১০টার দিকে প্রবল বাতাসের সঙ্গে যুক্ত হলো জলোচ্ছ্বাস। সিডর চূড়ান্ত আঘাত হানে। রাত ১০টার পরই মূলত ঘূর্ণিঝড় সিডর উপকূলীয় এলাকার বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলার সাউথখালী, রামপাল, মোংলাও সুন্দরবরেনর অদূরে দুবলারচরে আঘাত হানে। এ সময়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ২২০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়া আকারে আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। তার সঙ্গে ছিল ২০ থেকে ২৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস। ঝড়ের ব্যাসার্ধ ছিল ৭৪ কিলোমিটার, যা মুহূর্তের মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, লক্ষ্মীপুরে বিস্তৃত হয়।

নিমেষেই ধ্বংশ স্তুপে পরিণত হয় জনপদ ঘরবাড়ি, গাছপালা। জলোচ্ছ্বাসে তোড়ে ভেসে গেল হাজার হাজার মানুষ। পরের দিন চারদিকে শুধুই ধ্বংসলীলা। উদ্ধার হলো লাশের পর লাশ। মানুষ আর গবাদিপশু। দাফনের জায়গা নেই, রাস্তার পাশে গণকবর করে চাপা দেওয়া হলো বহু লাশের। স্বজন সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেল উপকূল এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। গবাদিপশুর মৃতদেহে এলাকা দূষিত হয়ে পড়ে।

প্রলয়ংকরী এ সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দেশের ৩০টি জেলা। ঝড়ে প্রায় ৫ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়। দক্ষিণের উপকূলীয় জেলাগুলো পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সরকারি হিসেবে সিডরে ৩৩৪৭ জন মানুষ নিহত, ৫৫২৮২ জন আহত ও ৮৭১ জন নিখোঁজ হয়। গবাদী পশু মারা যায় ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫০৭টি। ৩০টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এর মধ্যে ১২ টি জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০০টি উপজেলার ১৯৫০টি ইউনিয়নের প্রায় ২১ লাখ পরিবারের ৮৯ লাখ ২৩ হাজার ২৫৯ জন মানুষ, ১৬৯৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ২৮ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমির ফসল, ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৯৪২টি বাড়ি, ৮০৭৫ কিলোমিটার সড়ক এবং ৩৫৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আজও প্রিয়জন হারা অনেকেই এই দিন এলে বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সিডরের ক্ষতচিহ্ন বহন করে চলেছেন অনেকে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৫ নভেম্বর, ২০২১)