শুরুর বিপর্যয় সামলে দিন শেষে লিটন-মুশফিকের ব্যাটে স্বস্তি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দিনের প্রথম সেশনটা পাকিস্তানি বোলারদের সামনে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশের টপঅর্ডার ব্যাটাররা। দলীয় পঞ্চাশের আগেই সাজঘরে ফিরে যান প্রথম চার ব্যাটার। সেখান থেকে দিন শেষে ঠিকই চওড়া হাসি বাংলাদেশের সমর্থকদের মুখে। যার মূল কারিগর মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস।
জাতীয় দলের সাবেক ও বর্তমান উইকেটরক্ষকের ব্যাটে ভর করে দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৫৩ রান। শেষ বিকেলে আলোকস্বল্পতার কারণে নির্ধারিত ৯০ ওভারের পাঁচ ওভার আগেই দিনের খেলা শেষ ঘোষণা করেছেন আম্পায়াররা। মাত্র ১৬.২ ওভারে ৪ উইকেট পতনের পর ৬৮.৪ ওভারে আর উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগেই ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন লিটন। ক্যারিয়ারের ২৬তম টেস্টের ৪৩তম ইনিংসে তিন অঙ্কে পৌঁছতে তিনি খেলেছেন ১৯৯টি বল। যেখানে ছিল ১০ চার ও একটি ছয়ের মার। দিন শেষে লিটন অপরাজিত রয়েছেন ২২৫ বলে ১১৩ রান করে।
অন্যদিকে লিটনের এক ওভার আগে উইকেটে যাওয়া মুশফিক অপেক্ষায় রয়েছেন ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরির। তিনি ২৪তম ফিফটি করে অপরাজিত রয়েছেন ৮২ রানে। যা করতে মুশফিক খেলেছেন ১৯০ বল। তার ইনিংসে রয়েছে ১০টি চারের মার। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একাগ্রচিত্তে ব্যাটিং করেছেন মি. ডিপেন্ডেবল।
ইনিংসের ১৭তম ওভার থেকে জুটি বেঁধে অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেটে ৬৮.৪ ওভারে লিটন-মুশফিক যোগ করেছেন ২০৪ রান। টেস্ট ক্রিকেটে পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের এটি চতুর্থ দুইশ রানের জুটি। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এবারই প্রথম পঞ্চম উইকেটে হলো দুইশ রানের জুটি।
অথচ দিনের শুরুতে ঠিক বিপরীত চিত্র ছিল বাংলাদেশ দলের। লাঞ্চ বিরতির আগে স্কোরবোর্ডে রানের সংখ্যাটা ঠিকই ছিল, ২৬ ওভারে আসে ৬৯ রান। কিন্তু উইকেটের ঘরে ৪ সংখ্যাটি ছিল বড়ই বেমানান। একে একে আউট হন দুই ওপেনার সাইফ হাসান, সাদমান ইসলাম, ওয়ানডাউনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত এবং টু ডাউনে নামা অধিনায়ক মুমিনুল হক।
প্রথম দিনের প্রথম সেশনেই চট্টগ্রামের উইকেটে বলকে লাটিমের মত ঘুরিয়েছেন পাকিস্তানি স্পিনার সাজিদ খান। ডানহাতি এই অফব্রেক বোলার তার মায়াবী স্পিন দিয়ে সাফল্যও তুলে নেন। বাংলাদেশের বিপদ বাড়িয়ে তার বলে উইকেট হারান অধিনায়ক মুমিনুল হক।
দলীয় ৩৩ রানের মাথায় দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর নাজমুল হোসেন শান্ত আর মুমিনুল হক মিলে চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশের ইনিংস মেরামত করতে। কিন্তু মাত্র ১৫ রানের জুটি গড়তে পেরেছেন তারা দু’জন। ১৯ বলে ৬ রান করে ফিরে যান মুমিনুল।
সাজিদ খানের করা ইনিংসের ১৬তম ওভারের প্রথম বলেই ব্যাটের কানায় লাগিয়ে ক্যাচ দেন মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেয় পাকিস্তান। তাতে দেখা যায়, ব্যাটের কানায় লাগিয়েছেন বল মুমিনুল হক।
পরের ওভারেই উইকেট দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পাকিস্তানের মিডিয়াম পেসার ফাহিম আশরাফের বলকে খেলতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন সাজিদ খানের হাতে। টিভি আম্পায়ার রিপ্লে দেখে আউট দেন।
এর আগে দলীয় ১৯ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হিসেবে সাজঘরে ফেরেন সাইফ হাসান। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে ক্যাচ তুলে দেন আবিদ আলির হাতে। এরপর দলীয় ৩৩ রানের মাথায় হাসান আলির এলবিডব্লিউর শিকার হন আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম। দুই ওপেনারের ব্যাট থেকেই আসে সমান ১৪টি করে রান।
তখনও শেষ হয়নি প্রথম সেশন, খেলা হয়েছে মাত্র ১৬.২ ওভার। স্কোরবোর্ডে দেখা যাচ্ছিল ৪ উইকেটে ৪৯ রান। কঠিন চাপের মুখে দলকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব বর্তায় মুশফিক ও লিটনের কাঁধে। পাকিস্তানি বোলারদের তোপে প্রথম সেশনে খুব একটা রানের পেছনে ছোটেননি তারা। বরং উইকেট বাঁচিয়ে কাটিয়ে দেন সেশনের বাকি সময়।
তবে দ্বিতীয় সেশনে সাবলীল ব্যাটিং করেছেন মুশফিক ও লিটন। এই সেশনে খেলা হয় ৩১ ওভার। যেখানে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০২ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। উইকেটে থাকা দুই ব্যাটারই তুলে নেন ফিফটি। পঞ্চাশে পৌঁছতে লিটন খেলেন ৯৫ বল, আর মুশফিক নেন ১০৮টি বল।
দারুণ ব্যাটিং করে ততক্ষণে উইকেটে থিতু হয়ে যান দুজনই। এরই মাঝে উইকেটের সুযোগ তৈরি করে পাকিস্তান। শাহিন আফ্রিদির বলে ব্যক্তিগত ৬৭ রানের মাথায় শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন লিটন। কিন্তু সেটি হাতে রাখতে পারেননি সাজিদ খান। ফলে বেঁচে যান লিটন।
জীবন পেয়ে আরও সতর্ক সাবধানী খেলতে থাকেন তিনি। অবশেষে ইনিংসের ৭৮তম ওভারে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মিড অফের দিকে আলতো করে ঠেলে দিয়েই দ্রুত সিঙ্গেল নেন লিটন। যা তাকে পৌঁছে দেয় ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে। এর আগে দুইবার নার্ভাস নাইন্টিতে আউট হওয়ার পর অবশেষে সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি।
তবে ব্যক্তিগত ৯৬ রানের মাথায় বাম হাতের কবজি ও আঙুলে টান লাগে লিটনের। ফিজিও বায়োজিদের কাছ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে খেলা চালিয়ে নেন তিনি। লিটন সেঞ্চুরি তুলেও নিলেও দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে মুশফিক পারেননি তিন অঙ্কে যেতে। তবে সাবলীল ব্যাটিংয়ে ১৯০ বল মোকাবিলায় ৮২ রান করেছেন তিনি।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৬ নভেম্বর, ২০২১)