মন্ত্রিত্ব হারানো মুরাদ দেশ ছেড়ে কানাডার পথে
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে পৌঁছান মুরাদ। কিছু সময়ের মধ্যে শেষ হয় ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা। তার দেশ ত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ইমিগ্রেশন পার হতে কোনো সমস্যা হয়নি।
অশালীন বক্তব্য দিয়ে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো মুরাদ হাসান কানাডার উদ্দেশে উড়াল দিয়েছেন। এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ইকে ৮৫৮৫-এ তিনি প্রথমে দুবাই যাচ্ছেন, এরপর সেখান থেকে আরেকটি ফ্লাইটে কানাডা যাবেন।
বৃহস্পতিবার রাত ১টা ২০ মিনিটে এমিরেটসের ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মুরাদ হাসানের সঙ্গে তার পরিবারের কাউকে দেখা যায়নি। তিনি একাই কানাডা যাচ্ছেন।
এমিরেটসের ফ্লাইটটির ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ২০ মিনিট, তবে দুই ঘণ্টা দেরি করে সেটি ঢাকা ছাড়ে।
এর আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে পৌঁছান মুরাদ। কিছু সময়ের মধ্যে শেষ হয় ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা। তার দেশ ত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ইমিগ্রেশন পার হতে কোনো সমস্যা হয়নি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য দেয়ার পর এবং এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে ফোনে অশালীন বক্তব্য দেয়ার পর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পদত্যাগ করেন মুরাদ।
এরপর তাকে আওয়ামী লীগের দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি জামালপুর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগ তাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে প্রস্তাব কেন্দ্রে পাঠিয়েছে।
বুধবার থেকেই মুরাদের দেশ ছাড়ার আলোচনা শুরু হয়। তিনি কানাডায় যেতে চান বলে চাওর হয়ে যায়।
তবে ছাত্রলীগের এক নেতা তার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পর তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন কি না, এ নিয়েও আলোচনা তৈরি হয়।
দুপুরে বিষয়টি নিয়ে সচিবালয়ে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি জানান, মুরাদের দেশ ত্যাগে বাধা নেই। আর সরকারেরও বাধা দেয়ার কিছু নেই।
মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি বিদেশে যাবেন কি না, আমার জানা নেই। তিনি বিদেশে যাবেন না স্বদেশে থাকবেন, সেটি তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।’
অনলাইন সাক্ষাৎকারে এসে খালেদা জিয়া ও জাইমা রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হওয়ার পর মুরাদ বলেছিলেন, তিনি তার বক্তব্যে অটল। এসব সমালোচনা গায়ে মাখেন না।
তবে এর পরের ঘটনাপ্রবাহের পর তিনি সেই অবস্থান থেকে সরে এসে ফেসবুক পোস্টে ক্ষমা চান। পদত্যাগ করার পর মঙ্গলবার তিনি লেখেন, ‘আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।’
পরের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘আল্লাহর ওয়াস্তে’ মাফ চান তিনি।
মুরাদ লেখেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পরম শ্রদ্ধেয় মমতাময়ী মা, বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা, আমি যে ভুল করেছি তা আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে মাফ করে দেবেন। আপনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা আমি সবসময়ই মাথা পেতে নেব আমার বাবার মতো।’
গত সোমবার থেকেই গণমাধ্যমের ফোন ধরেননি না মুরাদ। কানাডা যাত্রা নিয়েও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ১০ ডিসেম্বর, ২০২১)