যুক্তরাষ্ট্রের পুরস্কার ঘোষণা ইতিবাচক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: যখনই কোনো দেশ ভালো করে, তার শত্রু বাড়ে, চাপও বাড়ে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারিভাবে বিশেষ কিছু করেনি। তারা তাদের কাজ করছে আর বাংলাদেশ বাংলাদেশের কাজ করছে। আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর একটি হোটেলে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকের এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
এসময় ‘বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিচ্ছে কি না’ সাংবাদিকরা তা জানতে চেয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যায় দণ্ডিত পলাতক দুই ঘাতক সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেনসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্যদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আওতাধীন ‘রিওয়ার্ড ফর জাস্টিস (আরএফজে)’ দপ্তর এ ঘোষণা দেয়। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এভাবে পুরস্কার ঘোষণা করে সফল হয়েছে। অনেক দেশে যখন তথ্য পাওয়া যায় না, আমি শুনেছি, ওসামা বিন লাদেনের ক্ষেত্রেও একইভাবে হয়েছে। এ পলিসি, কৌশল অনেক সময় সফল হয়। আমরা যেমন বঙ্গবন্ধুর তিন পলাতক খুনি, যাদের অবস্থান জানি না, তাদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছি। কেউ যদি সঠিক তথ্য দিতে পারেন, অবশ্যই সরকার তাদের পুরস্কার দেবে। তারাও (যুক্তরাষ্ট্র) এ রকম দিয়েছে।’
আব্দুল মোমেন আরও বলেন, ‘আমি মামলাটা (অভিজিৎ হত্যা) পুরোপুরি ফলো করিনি। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে ভালো বলবেন। শুনেছি যে ওই মামলায় যাদের শাস্তি হয়েছে, তাদের দুজন পলাতক। তারা কোথায় আছেন, কোন দেশে আছেন, আমরা তা জানি না। হয়তো মার্কিন এ উদ্যোগ (পুরস্কার ঘোষণা) আমাদের পলাতক খুনিদের ধরার যে প্রচেষ্টা, তাতে সহায়ক হবে।’
অভিজিৎ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ‘মেজর জিয়া’ নামে পরিচিত সৈয়দ জিয়াউল হক এবং আকরাম হোসেনের নাম উঠে এসেছে বিভিন্ন অনুসন্ধানে। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার ও লেখক অভিজিৎকে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদ।
অভিজিৎ খুনের চার বছর পর ছয় জনকে দায়ী করে চার্জশিট আদালতে দায়েরের জন্য পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট বলছে, এই হত্যাকাণ্ডে সেনাবাহিনী থেকে চাকরীচ্যুত মেজর জিয়াসহ মোট ১১ জন জড়িত।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ চাপ অনুভব করছে কি না- জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু লোক আছেন, যারা ধারাবাহিকভাবে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন। তারা মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন, মিথ্যা ভিডিও বানাচ্ছেন। আর আপনারা যেগুলো বলেন, সেগুলো ওরাও (যুক্তরাষ্ট্র) বলে। বাংলাদেশে একজন মরলে বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়, আর যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেলে বলা হয় দায়িত্ব পালনের সময় মারা গেছে। আমাদের দেশে একজন মরলেই সংবাদপত্র বড় হরফে লিখে বিনা বিচারে হত্যা। ওই সব এখন তারা ফলো করে। আপনাদের কাজগুলো নিয়েই যেগুলো তাদের দরকার, সেগুলো করে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশে কিছু লোক আছেন, যারা দেশের উন্নয়নে খুব সন্তুষ্ট নন। একদল লোক আছেন, যারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ এত ভালো করে ফেলছে কেন! সুতরাং তারা এটা পছন্দ করেন না। খুব সম্ভবত তারা তাদের কাছ থেকে টাকা পান। তারা তথ্যগুলো ঠিকমতো দেন না, মিথ্যা তথ্য দেন। আর অনেকে তা বিশ্বাস করেন। সেখানে আমাদের কিছু কাজ করার সুযোগ আছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) তাদের নিয়মে চলছে। সরকারিভাবে তারা বিশেষ কিছু করেনি। তারা তাদের কাজ করছে, আমরা আমাদের কাজ করছি।’
আব্দুল মোমেন আরও বলেন, ‘যখনই কোনো দেশ উন্নতি করতে থাকে, তার শত্রু বাড়ে, চাপও বাড়ে। আপনি যখন ভালো করেন, অনেক সহকর্মীই শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। আপনি বেশি ভালো করেন, কিছু শত্রুর দেখা পাবেন।’
প্রসঙ্গত, ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে বাংলাদেশে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব ও এর উচ্চপদস্থ বর্তমান-সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ২১ ডিসেম্বর, ২০২১)