আগুনে পুড়ে যাওয়াদের স্মৃতিচিহ্ন
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক মৃতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক জোহর আলী জানিয়েছেন, ওই লঞ্চটির এমন কোনো অংশ নেই যেখানে আগুনের ভয়াবহতা পৌঁছেনি। দগ্ধ হয়ে আহত ও মৃতের সংখ্যায় কেবিনে থাকা যাত্রীর সংখ্যাই বেশি। ঘুমের মধ্যেই তাদের জীবনে নেমে এসেছে ভয়াবহতা। অনেকেই পুড়ে কয়লা হয়েছে। পাওয়া গেছে কয়েকটি মাথার খুলি এবং পড়ে আছে শরীরের হাঁড়গোড়। জুতা-স্যান্ডেল পড়ে আছে অনেক। আবার অনেকেই সেখান থেকে লাফ দিয়েছেন। মাঝনদীতে পুড়ে ছাই হতে হলো অনেকগুলো তাজা প্রাণ।
চলতি বছরের মাঝামাঝিতে চালু হওয়া ঢাকা-বরগুনা নৌরুটের এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ধারণক্ষমতার সঠিক তথ্য জানা নেই। ধারণা করা হচ্ছে, লঞ্চটিতে তিন শতাধিক যাত্রী ছিল। যেহেতু সপ্তাহের শেষ দিন ছিল, তাই এ রুটে যাত্রীর চাপও ছিল। আগুন লাগার ঘটনা আঁচ করতে পেরে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে জীবন বাঁচাতে সুগন্ধা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছেন। এর মধ্যে শতাধিক নারী-পুরুষ দগ্ধ হয়ে বরিশাল, ঝালকাঠিসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে লঞ্চটিতে আগুন লাগে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের গাবখান চ্যানেলে এলে লঞ্চ থেকে কিছু যাত্রী নামতে পেরেছেন।
যাত্রীরা জানিয়েছেন, অনেকেই লঞ্চ থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। যাত্রীদের ধারণা হতাহতের সংখ্যা অনেক।
বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক কামাল হোসেন ভূঁইয়া জানিয়েছেন, আগুন ভোর ৫টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। যাত্রীরা অনেকেই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছেন। অনেকে হয়তো পারেননি।
সাইদুর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, লঞ্চে শিশু, বৃদ্ধ, নারীসহ কমপক্ষে তিন শতাধিক যাত্রী ছিল।
ইতালিফেরত এই যাত্রী বলেন, পোড়া গন্ধ পেয়ে আমি ভিআইপি কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে দেখি লঞ্চে আগুন লেগেছে। তখন আমার স্ত্রী, শ্যালককে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রচণ্ড ঠান্ডায় নদী সাঁতরে তীরে উঠেছি। লঞ্চ ভাসতে ভাসতে কোথাও গিয়ে থেমেছে। তবে এটুকু বলছি, লঞ্চের কোনো অংশ পোড়ার বাকি নেই।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১)