হরতালে হুমকির মুখে শুটিং
ইসহাক ফারুকী : চলছে ৮৪ ঘণ্টার হরতাল। এর আগের সপ্তাহে গেল ৬০ ঘণ্টার। তার আগের সপ্তাহেও ঠিক একই। এভাবেই চলছে একের পর এক হরতাল।
ফলে দেশের অন্যান্য ব্যবসায়ের মতো শুটিং হাউজের ব্যবসাও পড়েছে এর প্রভাব। একের পর এক এই হরতালে- চলচ্চিত্র, নাটক ও বিজ্ঞাপনের শুটিং-এ কাজে বড় ধরনের প্রতিবন্ধিকতা সৃষ্টি হয়েছে। এই হরতালে অনেক হাউজের কাজ প্রায় বন্ধ রয়েছে। এর কারণ হিসেবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দোষারোপ করছেন শুটিং হাউজ ব্যবসায়ী, প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পীরা।
গত ১০ বছরে রাজধানীর উত্তরা, ধানমণ্ডি ও গুলশানে অনেক শুটিং হাউজ গড়ে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি উত্তরায়। প্রযোজক-পরিচালকরা সুবিধা পেয়ে তাদের নির্মাণচাহিদা পূরণ করতে পারছেন এখান থেকে। তবে হরতাল, অবরোধ বা অরাজকতার কারণে এসব হাউজে গিয়ে শুটিং করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে।
রাজধানীর উত্তরার ‘আপন ঘর’, ‘মন্দিরা’, ‘আশ্রয়’, ‘আনন্দ বাড়ি’, ‘হৈ চৈ’, রাজ্যসহ ১৫টি শুটিং হাউজ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল, দুইটি শুটিং হাউজ ছাড়া আর কোথাও শুটিং হচ্ছে না। কোথাও বা পরিচালক আসতে পারেননি, আবার কোথাও বা শিল্পীরা আসতে পারেননি। আর যেসব জায়গায় শুটিং হচ্ছে, সেখানে সবাইকে অ্যাম্বুলেন্সে করে লোকেশনে আনতে হয়েছে।
এ সম্পর্কে পরিচালক জুয়েল বলেন, ‘চারদিনের হরতালের কারণে শিল্পীদের অ্যাম্বুলেন্সে লোকেশনে আনতে হয়। আবার বাসায় দিয়েও আসতে হয়। আর হরতালের জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়াও বেশি। অন্যান্য দিন হলে এই বাড়তি খরচ করতে হতো না।’
অন্যদিকে পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বল বলেন, ‘হরতালে শুটিং করতে গেলে খরচটা অনেক বেড়ে যায়। শুটিংয়ের দামি দামি যন্ত্রপাতি নিয়ে আতংকের মধ্যে থাকতে হয়। আর যাতায়াতে শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনাও প্রচুর। যে জন্য ব্যক্তিগত কাজ সারছি।’
শিল্পীরাও পড়েছেন সমস্যায়। অভিনেত্রী দীপা খন্দকার বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ভয় আর আতংক। ক্ষতিটা বেশি হয় প্রযোজক-পরিচালকদের।’
হাউজ ব্যবসায়ীরাও পড়ছেন বিপাকে। শুটিং হাউজ এসোসিয়েশন উত্তরার সভাপতি এবং শুটিং হাউজ ‘আপন ঘর’-র স্বত্ত্বাধিকারী খলিলুর রহমান এ সম্পর্কে বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। হরতালের কারণে শুটিং না হলে এই টাকা আমাদের পকেট থেকে দিতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হবে। সবচেয়ে বড় কথা, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পুরো মিডিয়ার অবস্থা খারাপ।’
শুটিং হাউজ এসোসিয়েশন উত্তরার সহ-সভাপতি ও ‘মন্দিরা’র ব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘আমাদের হাউজের খরচ সবচেয়ে বেশি। আমরা ধার করে হাউজ চালাচ্ছি। জানি না, কবে এই পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হবে। আমাদের চেয়ে যে-সব হাউজ অনেক ছোট তাদের ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে অনেক শুটিং হাউজ ঝরে পড়বে। যা আমাদের মিডিয়ার জন্য অনেক বড় হুমকি।’
(দিরিপোর্ট২৪/আইএফ/আইজেকে/এমডি/নভেম্বর ১১, ২০১৩)