ঋণ শোধে বিশেষ সুবিধা, দুই দিনেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর ব্যাংক ঋণ পরিশোধে বিশেষ যে সুবিধা ছিল, সেটি প্রত্যাহারের ঘোষণার দুই দিন পরেই উল্টা সিদ্ধান্ত নিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যবসায়ী নেতারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গিয়ে আলোচনায় পর এই ঘোষণা দেয়া হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বছর একজন ঋণ গ্রহীতার যে পরিমাণ পরিশোধ করার কথা তার মধ্যে ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলে কেউ আর খেলাপি হবে না। ছোট ঋণগ্রহীতাদের পাশাপাশি বড় ঋণ গ্রহীতারাও এ সুবিধা পাবেন।
বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সাথে বাংলাদেশ বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়।
দুই দিন আগে ২৮ ডিসেম্বর ব্যাংকার্স সভা থেকে জানানো হয়- সবার জন্য সুবিধা আর বাড়বে না। শুধু সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলে আর খেলাপি হবে না। ঘোষণাটি ব্যবসায়ীদের জন্য ছিল এক বড় ধাক্কা। এর কারণ, কিস্তিু না দিলে খেলাপির তালিকায় নাম উঠলে আমদানি-রফতানিতে নানা ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়, নতুন ঋণও পাওয়া যায় না।
এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী নেতারা বিকেলে ছুটে যান কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছেরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে তারা বৈঠক করেন। এতে ব্যবসায়ী নেতাদের নেতৃত্ব দেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অন্যান্য সব ঋণের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ শোধ করে ঋণ নিয়মিত করার যে সুবিধা ছিল সেটা ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’ অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত কেউ ঋণের ১৫ শতাংশ শোধ করলে খেলাপি হবেন না। ইতোমধ্যে অনেকে এ সুবিধা নিয়ে ঋণ নিয়মিতকরণ করেছে।’
বৈঠকে ব্যবসায়ীরা রফতানি উন্নয়ন তহবিলের ঋণসীমা বাড়ানো, স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ পরিশোধের দাবি জানান। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে পর্যালোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ হলে সাধারণ ছুটিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা দেখা দেয়। সে সময় ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ী উদ্যোগ শুরু করা মানুষদের জন্য নীতিসহায়তা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সিদ্ধান্ত হয়, ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি জমা না দিলেও কেউ খেলাপির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে না। পরে এই মেয়াদ বাড়ানো হয় ধাপে ধাপে। তবে ঢালাও সুবিধা ধীরে ধীরে কমায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তির কোনো অংশ জমা না দিয়েও খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ থাকলেও পরে তা কমানো হয়।
সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করোনার কারণে চলতি বছর একজন ঋণগ্রহীতার যে পরিমাণ পরিশোধ করার কথা ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে কেউ ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলে আর খেলাপি হবেন না।
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এ সুবিধা আরো বাড়ানোর দাবিতে চিঠি দিয়েছিল। তাদের যুক্তি হলো, বিশ্বে করোনা আবার বাড়ছে। ইউরোপ-আমেরিকায় ভাইরাসটি আবার ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভালো হলেও রফতানির প্রধান কেন্দ্রে আবার নানা বিধিনিষেধ আসছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব তৈরি হবে। আর এটা হলে ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের কিস্তি জমা দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
কিন্তু গত ২৮ ডিসেম্বর ব্যাংকার্স সভায় উল্টো সিদ্ধান্ত জানান গভর্নর ফজলে কবির। তিনি তাদের অবস্থান জানিয়ে বলেন, এবার আর ঢালাও সুবিধা নয়। আর এই সিদ্ধান্ত পাল্টাবে না।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১)