নতুন আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে ২০২২ সালকে স্বাগত
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: মহাকালের আবর্তে বিলীন হতে যাচ্ছে ২০২১ সাল। এ বছরের সকল দুঃখ-বেদনা ভুলে আজ মধ্যরাতে বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নতুন আশা নিয়ে বরণ করবে ইংরেজি নতুন বছর ২০২২ সালকে।
করোনাভাইরাস মহামারির ছায়াতেই বিশ্বজুড়ে এবারও কোটি কোটি মানুষ নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে। দুই বছর আগে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বজুড়ে ২৮ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৪ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে আবার গত অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।
ওমিক্রন নামে করোনার আরেকটি ধরণ ইতিমধ্যেই উদ্বেগ বাড়িয়ে চলছে। করোনা ডেলটা এবং ওমিক্রনের সংক্রমণের কারণে অনেক দেশ ইংরেজি নববর্ষের উৎসব বাতিল করছে।
ইংরেজি নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। নির্দেশনায় থার্টি ফার্স্ট নাইটে ইংরেজি নববর্ষকে বরণ উপলক্ষে উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠান না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে সকল ধরনের অনুষ্ঠান সীমিত আকারে পালন করা হচ্ছে। থার্টি ফার্স্ট নাইটে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে নির্ধারিত অনুষ্ঠানসমূহ উদযাপন করতে নগরবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। ঢাকা মহানগরের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলার স্বার্থে রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, রাস্তায় এবং উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের জমায়েত অথবা সমাবেশ বা উৎসব না করা এবং উন্মুক্ত স্থানে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান, সমাবেশ, নাচ, গান ও কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না। কোথাও কোনো ধরনের আতশবাজি বা পটকা ফোটানো যাবে না বলেও নির্দেশনায় বলা হয়।
‘খ্রিষ্টীয় নববর্ষ-২০২২’ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জিকা বহুল ব্যবহৃত। খ্রিষ্টাব্দ তাই জাতীয় জীবনে প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর নববর্ষকে বরণ করতে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন করা হলেও করোনা মহামারির কারণে বিগত বছরের মতো এবারের উৎসবের আমেজও অনেকটাই ম্লান।
রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে তবে বিশ্বব্যাপী করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে সতর্কতা প্রতিপালনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে একজনের আনন্দ যেন অন্যদের বিষাদের কারণ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নববর্ষ উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ এবং ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ বাঙালি জাতির জীবনে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠান-২০২১ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের সঙ্গে একযোগে পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে ২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০-দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করি, যেখানে সার্কভুক্ত ৫টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানগণ সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানমালায় যোগ দিয়েছিলেন। তাছাড়া বিশ্বের ৭৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানগণ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানগণ ভিডিও বার্তা ও অভিনন্দন পত্র প্রেরণ করেছেন, যেখানে সকলেই আমাদের সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আমাদের সরকারের উদ্যোগে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের রাজধানী এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরে জাতির পিতার নামে স্মারক ভাস্কর্য স্থাপন, সড়ক ও পার্কের নামকরণ করা হয়েছে। ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে সৃজনশীল অর্থনীতিতে আন্তজার্তিক পুরস্কার প্রবর্তন করেছে।’
নববর্ষ মানেই সকলের মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়া। স্বভাবতই নতুন বছর নিয়ে এবারও মানুষের প্রত্যাশা একটি করোনা মুক্ত বিশ্ব। তবে, করোনার টিকা ছাড়াও অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনাসহ মানবসম্পদ তৈরির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হচ্ছে গত বছরের মতো আগামী বছরের মোটা দাগের চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে, এটাই নতুন ইংরেজি বছরে সবার প্রত্যাশা।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১)