ঢাকাই সিনেমার এক উঠতি নায়ককে ৯ মাস আটকে রেখে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। ওই নায়কের নাম অনিক রহমান অভি। একটি মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে তাকে আটকে রেখে ওই প্রতিষ্ঠানটির মালিক নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব)-এর কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। পরে র‍্যাব মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) গাজীপুরের নগরীর ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে অভিসহ ২০ জনকে উদ্ধার করে। আর প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনসহ পাঁচজনকে আটক করে।

এ প্রসঙ্গে চিত্রনায়ক জায়েদ খান বলেন, ‘আমি জানতে পারি গাজীপুর ভাওয়াল মাদকাসক্ত কেন্দ্রে অভিকে আটকে রাখা হয়েছে। র‍্যাবকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানাই। র‍্যাব তাকে উদ্ধার করেছে। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞ।’

অভিকে আটকে রেখে যৌন নির্যাতন চালানো হতো, এমনটা ফেসবুকেও উল্লেখ করেছেন জায়েদ খান। তিনি বলেন, ‘চিত্রনায়ক অনিক রহমান অভি মাদকাসক্ত না হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘ ৯ মাস শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে শারীরিক যৌন নির্যাতন চালাতেন ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক এক নারী। বিষয়টি গোপন সূত্রের ভিত্তিতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‍্যাব অভিযান চালিয়ে সেখানে চিত্রনায়ক অভিসহ আরও ২০ জনকে উদ্ধার করেছে। সেখানে জানানো হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের লোকজন অভিযান পরিচালনার সময় মাদকাসক্ত ছিলেন!’

৯ মাস ওই বন্দিদশা থেকে উদ্ধার হয়ে রিহ্যাব সেন্টারের নারকীয় বর্ণনা দিলেন চিত্রনায়ক অভি। তিনি বলেন, ‘করোনাকালে আসলে নানাভাবেই আমরা চাপে ছিলাম। এটা আপনারা সবাই জানেন। আমিও সেই চাপে পরি যখন, দেখি আমার কোম্পানি ঠিকঠাকভাবে চলছে না বরং বন্ধ হওয়ার পথে। মূলত কর্মচারীদের বেতন দিয়ে গিয়ে আমি ছোট ছোট কিছু ঋণ নিয়েছি। তারপরও আমি সামলাতে পারছিলাম না। একটা সময় ঘুমের ওষুধ খাওয়া শুরু করি। তারপর ফ্যামেলি সন্দেহ শুরু করে যার জন্য, আমাকে রিহ্যাবে ভর্তি করা হয়। ডোপ টেস্ট করে সামান্য কিছু ঘুমের ওষুধের রক্তে মিশ্রণ পায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু আমার ফ্যামেলিকে জানানো হয় আমার অবস্থা খুবই খারাপ। এরজন্য তিনমাসের আগেই কোনোভাবে দেখা করা যাবে না। এরপর তিনমাস থেকে সাত মাস। এই সময়টুকু নানা ধরনের নির্যাতন করেছে। তারমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে যৌন নির্যাতন। এ ছাড়া নানা ধরনের মেডিসিন খাইয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, ইনজেকশেন দিয়ে খুব বাজে অবস্থা করে ফেলেছিল।’

অন্যদিকে অভিযানের পর কেন্দ্রটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সিলগালা করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘যেভাবে নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা, চিকিৎসা ও রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা, তার কিছুই এখানে মানা হয়নি। ভর্তি রোগীরা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের মালিকের নেতৃত্বে তাদের মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হতো।’

অভিকে মেডিকেল টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং তাকে কীসের জন্য আটকে রাখা হয়েছিল, সে বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

চিত্রনায়ক অনিক রহমান অভি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনেত্রী পপির সঙ্গে অভিনয় করেছেন ‘সাহসী যোদ্ধা’ সিনেমায়। এ ছাড়াও তিনি অভিনয় করেছেন ‘চটপটি ভালোবাসা’, ‘দুষ্টু ছেলে’, ‘ভালোবাসা ডটকম’সহ একাধিক সিনেমায়।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৬ জানুয়ারি, ২০২২)