বংশাল-লালবাগসহ রাজধানীর চার থানায় বিশ্বের সর্বাধিক মানুষের বসবাস
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাজধানীর চার থানার চার এলাকা লালবাগ, বংশাল ও গেন্ডারিয়া এবং খিলগাঁওয়ের সবুজবাগে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনঘনত্ব রয়েছে। এই এলাকাগুলোতে প্রতি একরে ৭০০ থেকে ৮০০ মানুষ বসবাস করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া এক চিঠিতে জনঘনত্বের এই চিত্র তুলে ধরেছে নগর-পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।
বিআইপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠিটি দিয়েছে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ (২০১৬-৩৫) নিয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে। সংগঠনটির সভাপতি আকতার মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খানের সই করা চিঠিতে সাতটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, মহানগর বা মেগাসিটির ক্ষেত্রে জনঘনত্বের মানদণ্ড ধরা হয় একরপ্রতি সর্বোচ্চ ১২০ জন। অথচ ঢাকার ৬৩ শতাংশ এলাকায় প্রতি একরে ৩০০ জনের বেশি মানুষ বাস করে। একরপ্রতি জনঘনত্ব ৪০০ জনের বেশি ঢাকার ৪০ শতাংশ এলাকায়।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকাকে বসবাস-অযোগ্যতার হাত থেকে বাঁচাতে হলে জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই। ঢাকামুখী মানুষের স্রোত বন্ধ করতে হবে। ঢাকার বাইরে কর্মসংস্থান ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা বাড়ানো জরুরি। সবচেয়ে বেশি জনঘনত্বের চার এলাকা অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধার সব মানদণ্ডে পিছিয়ে রয়েছে।
রাজধানীর চার এলাকা লালবাগ, বংশাল ও গেন্ডারিয়া এবং খিলগাঁওয়ের সবুজবাগে ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। একটি ভবন তৈরি হয়েছে আরেকটি ভবন ঘেঁষে, কোনো ফাঁকা জায়গা রাখা হয়নি। রাস্তাঘাটও সরু। অনেক জায়গায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ঢুকতে পারে না। যেমন পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া একসময় ‘গ্রান্ড এরিয়া’ নামে পরিচিত ছিল। ঢাকার অপেক্ষাকৃত সচ্ছল মানুষের বাস ছিল সেখানে। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বুড়িগঙ্গা নদী। সেই নদীর পানি এখন দূষিত। আর গ্রান্ড এরিয়া নামটি গেন্ডারিয়ায় রূপান্তরিত হয়েছে, এলাকাটি হয়ে গেছে অপরিকল্পিত ও ঘিঞ্জি।
গত ৩০ ডিসেম্বর সংশোধিত ড্যাপের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এখন এর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নগর-পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, বাসযোগ্য শহরের দিক দিয়ে ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম। তালিকায় ঢাকার চেয়েও খারাপ অবস্থানে রয়েছে পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোরেসবি, নাইজেরিয়ার লেগোস ও সিরিয়ার দামেস্ক।
বিআইপি বলছে, বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা শহরের তলানিতে অবস্থানের অন্যতম কারণ অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও অধিক জনঘনত্ব। উন্নয়ন পরিকল্পনায় জনঘনত্ব এবং অবকাঠামো ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধার আলোকে নগরের ভারবহনক্ষমতা বিবেচনা না করা হলে যেকোনো শহর তার বাসযোগ্যতা হারায়। ঢাকা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ড্যাপের মধ্যে জনঘনত্ব পরিকল্পনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা ইতিবাচক পদক্ষেপ।
ড্যাপের সংশোধিত প্রস্তাবে পরিকল্পিত এলাকার জন্য প্রতি একর আয়তনে ২৫০ এবং অন্য এলাকার জন্য প্রতি একরে ২০০ জন মানুষ বসবাস করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে বিআইপি বলছে, একটি বড় শহরের জনঘনত্বের জন্য মানদণ্ড ধরা হয় প্রতি একরে ৭০ থেকে ৮০ জন, যা সর্বোচ্চ ১২০ জন পর্যন্ত হতে পারে। জাপানের টোকিও শহরের কেন্দ্রীয় এলাকার জনঘনত্ব একরপ্রতি ৯০ জনের কম। অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি শহরের সর্বোচ্চ জনঘনত্ব প্রতি একরে ৫৮ জন। নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটানের জনঘনত্ব ১১২ এবং অন্যান্য এলাকার ঘনত্ব প্রতি একরে ৬০-এর নিচে।
এর আগে ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী, দৃষ্টিনন্দন ও নাগরিক সুবিধার আধারে পরিণত করতে ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান (১৯৯৫-২০১৫) বা ২০ বছর মেয়াদি বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছিল। কিন্তু নানা অসংগতি থাকায় ড্যাপ সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই কাজই এখন চলছে। ওদিকে পরিকল্পনা নিতে সময়ক্ষেপণের কারণে রাজধানীর সম্প্রসারিত এলাকাও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৮ জানুয়ারি, ২০২২)