দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ম্যাচ বাঁচাতে যেভাবে ব্যাটিং করা দরকার ছিল সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। বলের পর বল ডট খেলা, মাটি কামড়ে পড়ে থাকা…নাঈমের মাথায় এসবই ঘুরছিল। কিন্তু হঠাৎ তালগোল পাকানো এক শট তার ব্যাটে। তাতে বিদায় চূড়ান্ত হয়ে যায়।

স্কোর: বাংলাদেশ ২৭৮/১০

ইনিংস ও ১১৭ রানে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে বাংলাদেশকে হারলো নিউ জিল্যান্ড। এ পরাজয়ে টেস্ট সিরিজ ড্র হলো। এর আগে মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জিতেছিল ৮ উইকেটে।

ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ে লিটনের সেঞ্চুরি

টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পেলেন লিটন দাস। অসাধারণ ব্যাটিংয়ে, উইকেটের চারিপাশে বাউন্ডারির ফুলঝুরি ছুটিয়ে, প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগারের দেখা পেলেন লিটন। দল যখন খাদের কিনারায় তখন ব্যাটিংয়ে আসেন। রক্ষণাত্মক ক্রিকেটের পরিবর্তে প্রতি আক্রমণে রান তোলেন এই ব্যাটসম্যান। তাতে পেয়ে যান সাদা পোশাকে আরেকটি সেঞ্চুরি।

শতরানের জুটির পর সাজঘরে সোহান

মুমিনুল ও ইয়াসির অতি দ্রুত বিদায় নিলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন সোহান ও লিটন। তাদের শতরানের জুটিতে প্রতিরোধ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু সোহান আউট হয়ে হাল ছেড়ে দেন। পেসার ডার্ল মিচেলের বল মিড অফ দিয়ে উড়াতে চেয়েছিলেন। টাইমিংয়ে গড়বড় হয়। সেখানে দারুণ ক্যাচ নেন ওয়াগনার। ৫৪ বলে ৩৬ রান করে ডানহাতি ব্যাটসম্যান ফেরেন সাজঘরে।

৪ চারে ১৬ রান নিয়ে লিটনের ফিফটি

বোল্টের এক ওভারে ১৬ রান তুললেন লিটন দাস। বাঁহাতি পেসারকে স্রেফ এলোমেলো করে দিলেন লিটন। এ সময়ে ডানহাতি ব্যাটসম্যান তুলে নেন নিজের ফিফটি। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি তার ১২তম ফিফটি। ৬১তম ওভারের প্রথম বল কাট করে গালি দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠান লিটন। পরের বল ড্রাইভ করে মিড অফ দিয়ে সীমানার বাইরে। পরেরটা ড্রাইভ করে কভার দিয়ে বাউন্ডারিতে। এক বল বিরতির পর আরেকটি চার। শেষটা স্ট্রেইট ডাউন দ্য গ্রাউন্ড।

৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ

দ্বিতীয় সেশনে সমানে সমান লড়াই করলো দুই দল। কিন্তু ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশই এখন ব্যাকফুটে। এই সেশনে ২৫ ওভার খেলা হয়েছে। ৭৮ রান তুলেছে বাংলাদেশ। হারিয়েছে ৩ উইকেট। সব মিলিয়ে ১৫২ রানে নেই বাংলাদেশের ৫ উইকেট।

ব্যাটসম্যানদের আউটের ধরণগুলো বাজে। যেসব বল চাইলেই ছেড়ে দিয়ে উইকেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিকে থাকা যায় সেসব বল খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। মুমিনুল ও নাঈম শেখ থিতু হওয়ার পর সবচেয়ে বাজে শটে আউট হয়েছেন। ইয়াসির ওয়াগনারের ভয়ংকর বাউন্সারের শিকার।গুরুত্বপূর্ণ এই ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নড়বড়ে। তবুও লিটন ও সোহানের ব্যাটে শেষ ঘণ্টায় প্রতিরোধ পেয়েছে বাংলাদেশ। লিটন ২৩ ও সোহান ৬ রানে ব্যাটিং করছেন।

ওয়াগনারের তোপে দিশেহারা বাংলাদেশ

প্রথম ইনিংসের পর ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্স বলেছিলেন, ব্যাটসম্যানরা বল ছাড়তে না পারায় উইকেট বিলিয়ে এসেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই ভুল না করার কথাও বলেছিলেন তিনি। কিন্তু তার শিষ্যরা সেই ভুলের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।

নাঈম শেখের পর মুমিনুল হক ফিরলেন অফস্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে। অথচ বলটা চাইলেই ছাড়তে পারতেন তিনি। নেইল ওয়াগনারের বলে স্লিপে রস টেইলরের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩৭ রান করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।

নতুন ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলী রাব্বীকেও টিকতে দেননি বাঁহাতি পেসার। ভয়ংকর বাউন্সারে ইয়াসির সাজঘরে ফেরেন। শরীরের উপর তাক করা বাউন্সারে ব্যাট নামাতে পারেননি প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা ইয়াসির। বল তার ব্যাটে লেগে টপ এজ হয়। লাথাম সহজ ক্যাচ নিয়ে তাকে সাজঘরের পথ দেখান। এবার ২ রানের বেশি করতে পারলেন না ইয়াসির।





সাউদির অফস্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন নাঈম। বামদিকে ঝাপিয়ে বল তালুবন্দি করেন কিউই অধিনায়ক লাথাম। ৯৮ বলে ২৪ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন নাঈম। অভিষেকে প্রথম ইনিংসে রানের খাতা খুলতে না পারলে দ্বিতীয় ইনিংসে সামর্থ্য দেখালেন।

ব্যাটিং দৃঢ়তায় লড়াইয়ের আশা

তৃতীয় দিনের সকালের সেশন বাংলাদেশের নামে লিখা রইলো। আগের দিনের হতশ্রী ব্যাটিং ভুলে এদিন সকালে দৃঢ়তা দেখালেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তাতে বাড়ছে লড়াইয়ের আশা।

বিশেষ করে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা বেশ দায়িত্বশীল। এই সেশনে সাদমান ইসলাম ও নাজমুল ইসলাম শান্তর উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ৭৪ রান এসেছে ২৮ ওভারে। রান রেট ২.৬৪।

সাদমান ও নাঈম দিনের শুরুতে বোল্ট ও সাউদির স্পেল আটকে দেন। দুই পেসারের অসাধারণ বোলিং স্পেলে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। এই টেস্ট বাঁচাতে হলে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। সেভাবেই ব্যাটিং করছিলেন দুজন।

কিন্তু জেমিনসন বোলিংয়ে আসতেই সাদমান মনোযোগ হারালেন। উইকেট উপহার দিলেন প্রতিপক্ষকে। এরপর জুটি গড়েন শান্ত ও নাঈম। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে তাদের জুটিতে বড় আশা দেখতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু বিরতির ঠিক আগে শান্তর বিদায়ে ধাক্কা খায় অতিথিরা।

নেইল ওয়াগনারের পরপর দুই ওভারে শান্তর ব্যাটে চার-ছক্কার ফুলঝুরি। বাঁহাতি পেসারের শর্ট বলে বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে পুল শট খেলেছেন শান্ত। মিড উইকেট দিয়ে বল ছক্কায় উড়িয়েছেন। এরপর দারুণ তিনটি পুল শটে পেয়েছেন তিন বাউন্ডারি। প্রথম সেশনের শেষ দিকে দুজনের লড়াই বেশ জমে উঠে। সেই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জিতে যান ওয়াগনারই।

তার শর্ট বল ফাইন লেগ দিয়ে উড়াতে গিয়ে বোল্টের হাতে ধরা পড়েন শান্ত। আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিং করা শান্তর ইনিংসটি থেমে যায় সেখানেই। ৩৬ বলে ২৯ রান করেন তিনি। ইনিংসের ২৬ রানই পেয়েছেন বাউন্ডারি থেকে।

মুমিনুল ফিরতে পারতেন প্রথম বলেই। মিচেলর সরাসরি থ্রো স্টাম্পে আঘাত করলে শূন্য রানে বিদায় নিতে পারতেন। নাঈম ছিলেন বেশ ধীরস্থির। ৮১ বলে করেছেন ১৫ রান। মুমিনুল তার সঙ্গে অপরাজিত আছেন ২ রানে।

শান্তকে ফিরিয়ে ওয়াগনারের প্রতিশোধ
চার-ছক্কায় ওয়াগনারকে এলোমেলো করেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু নিজেকে স্থির রেখে বাঁহাতি পেসার এগিয়েছেন নিজের মতো করে। তাইতো লড়াইয়ে জিতে গেলেন। দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি পুল শটে ওয়াগনারকে তিন চার ও এক ছক্কা হাঁকান শান্ত। তার শর্ট বলগুলো বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে থাকেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু শেষ হাসিটা হাসলেন ওয়াগনার। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে তার আরেকটি শর্ট বল ফাইন লেগ দিয়ে উড়াতে গিয়ে ক্যাচ দেন শান্ত। বোল্ট বল তালুবন্দি করেন চোখের পলকেই। ৩৬ বলে ২৯ রান করে শান্ত ফেরেন সাজঘরে।

শান্তর ছক্কায় বাংলাদেশের ফিফটি

পেসার নেইল ওয়াগনারের শরীরের উপর তাক করা বাউন্স মিড উইকেট দিয়ে উড়ালেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বল হাওয়ায় ভেসে গেল সীমানার বাইরে। ৪৯ থেকে এক লাফে বাংলাদেশের রান ৫৫। পরের বলে ওয়াগনারের একই বল। শান্তর নিয়ন্ত্রিত পুল। এবার লেগ স্লিপের ফাঁক দিয়ে বল গেল সীমানায়।

শান্তকে জীবন দিলেন মিচেল

সাদমানকে ফেরানোর পরের ওভারেই আরেকটি উইকেট পেয়ে যেতে পারতেন জেমিনসন। ডানহাতি পেসারের শর্ট বলে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন নতুন ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু বলটা জমাতে পারেননি ডার্ল মিচেল। ৪ রানে জীবন পান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

আবারো উইকেট উপহার সাদমানের

পেসার জেমিনসনের লেগ স্টাম্পের ওপরের বল। চাইলেই বলটা ছেড়ে দিতে পারতেন সাদমান ইসলাম। কিন্তু আলগা এক শট খেললেন। সেটাও এক হাতে। যা হবার তাই হলো। উইকেটের পেছনে টম ব্লান্ডেল দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে সাজঘরের পথ দেখালেন বাঁহাতি ওপেনারকে। প্রথম ইনিংসেও অফস্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন। এবারও বাজে শটে উইকেট উপহার দিয়ে এলেন প্রতিপক্ষকে। ২১ রান আসল তার ব্যাট থেকে। সাদমানের বিদায়ে তিনে ব্যাটিংয়ে এসেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

দ্বিতীয় ইনিংসে সাবধানী শুরু বাংলাদেশের

ফলো-অনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে বেশ সাবধানী শুরু করেছেন দুই ওপেনার সাদমান ও নাঈম। নিউ জিল্যান্ডের দুই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদির প্রথম স্পেল কোনো বিপদ ছাড়াই ভালোভাবে কাটিয়ে দেন তারা। ব্যাটিংয়ে এখন পর্যন্ত জড়তা দেখা যায়নি। দুজনের কেউই বাজে শট খেলেননি। এই টেস্ট বাঁচাতে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। দুুই বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাটিং তেমনই মনে হচ্ছে।

ফলো-অনে বাংলাদেশ, ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কা

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশকে ১২৬ রানে অল আউট করলেও নিউ জিল্যান্ড বাংলাদেশকে ফলো-অনে ফেলবে কি না সেই সিদ্ধান্ত জানায়নি। মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের খেলা শুরুর আগে নিউ জিল্যান্ড বাংলাদেশকে ফলো-অনে পাঠানোর খবর নিশ্চিত করে।

ফলে দিনের শুরু থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কা। প্রথম ইনিংসে নিউ জিল্যান্ড ৫২১ রান করেছিল। জবাবে বাংলাদেশ ১২৬ রানে গুটিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ইনিংস পরাজয় এড়াতেই বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ইনিংসে করতে হবে ৩৯৫ রান।

ম্যাচের ফল অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে আছে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো করতে পারে কিনা সেটাই দেখার। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ম্যাচের শেষ দুই দিনে আছে বৃষ্টির শঙ্কা।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১১ জানুয়ারি, ২০২২)