সাকরাইন উৎসব আজ , ঘুড়িতে ছেয়ে যাবে ঢাকার আকাশ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আজ (১৪ জানুয়ারি, শুক্রবার) বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী পৌষ মাসের শেষ দিন। এদিন ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্য। এই উৎসবটি তাদের কাছে সাকরাইন উৎসব নামে পরিচিত।
ঘুড়ি ওড়ানো, আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে এ উৎসব উদযাপন করা হয়।
তবে এবার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবে নিষিদ্ধ থাকছে ফানুস ও আতশবাজি। পৌষ মাসের শেষ দিন পৌষ সংক্রান্তির এ অনুষ্ঠান ঘিরে এরইমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
এ বছর থার্টিফার্স্টে ফানুস পড়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটায় সাকরাইন উৎসব নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। আতশবাজির বিকট শব্দে নগরবাসীর ভোগান্তির বিষয়টিও বিবেচনায় আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাকরাইন উৎসবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। তারা যাতে এমন উদযাপন না করে সেজন্য পুরান ঢাকার বিভিন্ন কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করা কঠিন। কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এগুলো বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছি।’ এবার থার্টিফার্স্ট নাইটে ফানুস থেকে অনেকগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে সারাদেশ থেকে প্রায় ২০০টি অগ্নিকাণ্ডের খবর আসে ফায়ার সার্ভিসের কাছে। কয়েকটি আগুন আতশবাজির কারণেও হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে জানা গেছে, পুরান ঢাকার ঐতিহ্য পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন উৎসব উদযাপনে বাংলা ১৪২৮ সালের ৩০ পৌষ শুক্রবার পুরান ঢাকাবাসীর পাশাপাশি ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কর্মসূচীর অংশ হিসেবে প্রতিটি ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লায় কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ানো ও প্রতিযোগীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ কর্মসূচী রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, বাংলাদেশের প্রাচীন উৎসব সমূহের মধ্যে পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসব অন্যতম। যদিও এটি সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী পালিত হয় না। তবে এটি খুব জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি সংস্কৃতি।
উৎসবে দিনভর ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রঙবেরঙ ফানুসে ছেয়ে যায় নগরীর আকাশ। এছাড়া সন্ধ্যায় আগুন খেলা দিয়ে সাকরাইন বিদায় দেওয়ার পুরানো প্রচলন রয়েছে।
মুখে কেরোসিন নিয়ে মশালের আগুনের উপর ফুঁ দেওয়ার ফলে আগুনের দলার সৃষ্টি করে আগুন খেলা হয়। বর্তমানে উৎসবে ডিজে নাচ, প্রজেক্টর আর ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম যোগ করে দেওয়া হয়েছে ভিন্নমাত্রা।
উল্লেখ্য, পুরান ঢাকায় ঘুড়ি উড়িয়ে সাকরাইন উৎসব পালন করা একটি ঐতিহ্যবাহী রেওয়াজ। তবে এর মধ্যে ফানুস উড়ানোর কারণে অনেক সময় অগ্নিকাণ্ডের মাধ্যমে মুহুর্তেই আনন্দ বিষাদে পরিণত হতে পারে। এজন্য ফানুস উড়ানো ও আতশবাজী নিষিদ্ধ করা উচিত। অপসংস্কৃতি এ চর্চা উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৪০ সালের এদিনে মোঘল আমলে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি উড়ানো হয়। সেই থেকে পুরান ঢাকায় এই দিনটি অন্যতম উৎসবে পরিণত হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৪ জানুয়ারি, ২০২২)