সক্ষমতা বাড়াতে পুলিশে সংযোজন হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে পুলিশে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবট, ড্রোন ইত্যাদি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করা হবে।
গতকাল বুধবার পুলিশ সপ্তাহের চতুর্থ দিনে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের সম্মেলনে এসব ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এতে পুলিশ কর্মকর্তারা বাহিনীর উন্নয়নে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
আইজিপি দক্ষ ও সময় উপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নিয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার আহবান জানান।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সভায় সুনির্দিষ্ট ২৪টি এজেন্ডা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। আলোচনায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ছাড়াও উঠে আসা বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, নতুন উইং বা ইউনিট গঠন, পদ সৃজন, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, নতুন সার্ভিস চালু, চিকিৎসা সংক্রান্ত, পুলিশ ওয়েলফেয়ার ও ভাতা, পরিবহন সংক্রান্ত, সক্ষমতা বৃদ্ধি, শিক্ষা, আবাসন, পদায়ন, পদক ও সম্মাননা, পুলিশের পোশাক, পেনশন ও অবসর ও ছুটি সংক্রান্ত বিষয়।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গি হামলা, ক্লুলেস মামলা, সাইবার নিরাপত্তা এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের শনাক্তকরণ ও আইনের নিকট সোপর্দ করার নিমিত্তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রযুক্তিগত ও কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সকল ধরনের তথ্য ভান্ডার অথবা ডাটাবেজে প্রবেশাধিকার একান্ত প্রয়োজন। এজন্য দরকার ডাটা ফিউশন টেকনোলজি। এর মাধ্যমে সকল ডাটা বা তথ্য সন্নিবেশ করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ডাটা বলতে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন তথ্য, ভোটার আইডি তথ্য, মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর তথ্য, মোবাইল আইএমইআই তথ্য, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য, ব্যাংকিং রেকর্ড ডাটাবেজ, ক্রিমিনাল ডাটাবেজ, ভাড়াটিয়াদের তথ্য, টিআইএন তথ্য, বিআইএন তথ্য, সিসিটিভি ফুটেজ, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন তথ্য, ড্রাইভিং লাইসেন্স তথ্য, পাসপোর্টের তথ্য ইমিগ্রেশন তথ্য, বিদেশি নাগরিকের তথ্য, ডিএনএ তথ্য, জেলখানার কয়েদিদের তথ্য, ওয়ারেন্ট ইস্যু ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তথ্যাদি, সিডিএমএস, পিআইএমএস, অটোমেটেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এএফআইএস), ভূমি রেজিস্টেশন সংক্রান্ত তথ্যকে বোঝানো হয়েছে। এসব তথ্য এক জায়গায় স্থানান্তর করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও অত্যাধুনিক কাস্টমাইজড সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের পরামর্শ উঠে আসে।
পুলিশ সদর দফতরের ইনোভেশন অ্যান্ড বেস্ট প্র্যাকটিস শাখা কর্তৃক প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক পুলিশিংয়ে বিগ ডাটার ব্যবহার সংক্রান্ত উদ্ভাবনী সুপারিশ সম্মেলনে আলোচিত হয়।
সুপারিশে উঠে আসে, আগামী বছরগুলোতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং হবে সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। তাই এর উৎকর্ষতার বাস্তবতায় অপরাধীদের শনাক্তকরণ এবং গ্রেফতারে পুলিশের প্রয়োজন সব ধরনের অনলাইন এবং অফলাইন ডাটাবেজে প্রবেশাধিকার।
বিগডাটা পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নাগরিকদের তথ্য সম্বলিত সব ধরনের ডাটাবেজ নিজস্ব ফরমেটে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এতে অপরাধ ও অপরাধী সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দ্রুত পুলিশ বের করতে সক্ষম হবে এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতারপূর্বক বিচারের মুখোমুখি করতে পারবে।
ডিপওয়েব ও ডার্কওয়েবে সংঘটিত ক্লুলেস অপরাধের সাইবার ক্রিমিনাল শনাক্তকরণ এবং আসামি গ্রেফতারে বিগডাটা পুলিশিং অত্যন্ত কার্যকর এবং ফলপ্রসূ হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
সম্মেলন শেষে ডিআইজি (অপারেশন্স ও মিডিয়া অ্যান্ড প্লানিং) মো. হায়দার আলী খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, সন্ত্রাস মোকাবিলা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশ পুলিশকে ২০৪১ সালের উন্নত দেশের উপযোগী জনবান্ধব ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পুলিশের আধুনিকায়ন প্রয়োজন।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৭ জানুয়ারি, ২০২২)