আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, বান্দরবান : বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার মেজর টিএম আলীর নাম এখনো বান্দরবানে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ঠাঁই পায়নি।

১৯৭১ সালের ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার মেজরের দায়িত্ব পালন করেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত মুক্তিযোদ্ধা মেজর টিএম আলী। এক সম্মুখ যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর গোলার আঘাতে রোয়াংছড়ি উপজেলার ক্যানাইজু পাড়ায় শহীদ হন তিনি। বীরত্বের জন্য পরবর্তীতে বীর প্রতীক খেতাব পান। কিন্তু তারপরও জেলা শহরের বাসস্টেশনস্থ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে ঠাই পায়নি তার নাম। সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি ক্যানাইজু পাড়ার কবরও।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার সেলিম আহম্মেদ চৌধুরী, আবুল কাসেমসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা বলেন- জেলা স্মৃতিস্তম্ভে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা টিএম আলীসহ সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অর্ন্তভুক্ত করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে বান্দরবানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের দাবি জানচ্ছি।

তারা বলেন, ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর হানাদার আর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক যুদ্ধে ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী দূর্গম ক্যানাইজু পাড়া কেঁপে উঠে। সে সময় শত্রুপক্ষের গোলার আঘাতে শহীদ হন টিএম আলী। এছাড়া সহযোদ্ধা সানু অং, উদয় সেন তঞ্চঙ্গ্যাসহ আরও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা নিহত হন। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ায় ক্যানাইজু পাড়ায় নির্যাতন এবং হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। তার পরদিনই শত্রুমুক্ত হয় বান্দরবান।

২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে ক্যানাইজু পাড়া কারবারী সম্মেলনে গিয়ে বান্দরবানের কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, রোয়াংছড়ি উপজেলার ইউএনও এবং সাংবাদিকেরা স্থানীয় প্রবীণ ব্যাক্তিদের সহায়তায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা টিএম আলীর কবর শনাক্ত করেন। কবরে চিহ্ন হিসেবে চারটি কাঠের খুঁটি পুতে প্রথমবারের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত করা হয়। দোয়া করা হয় নিহতদের স্মরণে।

হানাদার বাহিনীর সঙ্গে বান্দরবানে মুক্তিযোদ্ধাদের কোথায় যুদ্ধ হয়েছিল তাও জানে না অনেকে। গণমাধ্যমে লেখালেখির পর প্রশাসন টিএম আলীর কবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়ে কবরের চারপাশে তিনফুট দেওয়াল নির্মাণ করে দায়িত্ব শেষ করেছে। অযত্ম-অবহেলায় এখনো চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন টিএম আলী ও তার সহযোদ্ধারা।

জেলা প্রশাসক কেএম তারিকুল ইসলাম জানান, সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় বান্দরবান জেলায়ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের কাজ করা হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/এএস/ডব্লিউএস/মার্চ ২৬, ২০১৪)